প্রকৃতির মধ্যেই থাকে অনাথ ও দুঃস্থ শিশু কিশোরেরা। এখন প্রকৃতিতে বসন্তের ছোঁয়া। একদিন পরেই বসন্ত উৎসব। বাঙালির রঙের উৎসব দোল। কিন্তু রঙের উৎসবের আনন্দের পরশ পায় না এগরা খাগদা অনাথ আশ্রমের শিশুরা। দোতলা নড়বড়ে কাঁচা দেওয়াল আর টালির চালের বাড়ি। এই বাড়িই বেশ কয়েকজন শিশুর আশ্রয়। আশ্রয়ের অবস্থা নড়বড়ে হলেও প্রকৃতি এখানে অপরূপ। নিরিবিলি প্রকৃতির কোলে পরম স্নেহে ও শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বিকাশ ঘটে শিশুমনে। আশ্রমে একটা সময়ে দেড়শোর বেশি ছাত্র ছিল। কমতে কমতে এখন ৩৮ জন থাকে। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ধরে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এই অনাথ আশ্রম চলছে।
আশ্রম রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মাটির দেওয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। সেই ফাটল দিয়ে বাতাস সহজেই চলাচল করে। পাঁচ দশকের বেশি এই প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত দোল, বসন্ত উৎসবের ছোঁয়া লাগেনি। শিশুশ্রেণি থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অনাথ ও দুঃস্থ শিশুরা এই আশ্রমের অতিথি হিসেবে রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে কয়েকজন পরিজনের কাছে ফিরেছে। এখন আশ্রমে রয়েছে সাত জন শিশু। দোলে এরাই আশ্রমে থাকবে।
আজ পর্যন্ত আশ্রম পরিসরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর বসেনি। নিয়ম মতো সরকারি অনুদানের অর্থ সব মাসে আসে না। বকেয়া থাকায় অনেক সময় ঋণ করেও আশ্রমে আনাজ চাষ করে শিশুদের খাবার জোগাড় করতে হয়। নিয়ম করে অনাড়ম্বর ভাবে স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্র দিবস আশ্রমে পালিত হয়। দোলের আনন্দ আশ্রমের শিশুরা জানেই না। রঙের উৎসবে বেরং জীবন অনাথ আশ্রমের বাসিন্দাদের।
আশ্রমের আবাসিক অষ্টম শ্রেণির রাজেন গাড়ু বলে, ‘‘দোলের উৎসব এখানে হয় না। দোলের দিনে বাইরে অনেক আনন্দ দেখি। মাইকের গান শুনতে পাই। কেউ আমাদের দোলে আমন্ত্রণ করে না। জেঠুরা দোলের দিনে আবির কিনে দেন।”
শিশুসদনের প্রধানশিক্ষক গৌরহরি পাত্র বলেন, ‘‘দোল উৎসব এখানে হয় না। সরকারি বা কোনও প্রতিষ্ঠানে দোল উৎসবে আমাদের শিশুদের আমন্ত্রণ জানায় না। সেটুকু সামর্থ্য থাকে সেই নিয়ে শিশুদের হাতে আবির তুলে দিই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)