Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দুর্যোগকে হারিয়েই শব্দতাণ্ডব

প্রচার থেকে পুলিশি অভিযান, বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত, ধরপাকড়, এমনকী অঝোর ঝারায় বৃষ্টি— কোনও কিছুই বাধা হল না রেলশহরের শব্দ-তাণ্ডবে। বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই খড়্গপুর শহরের সর্বত্র দেদার শব্দবাজি ফাটল।

সশব্দে: এমন রোশনাইয়ের মধ্যেই সজোরে ফেটেছে শট্‌স। নিজস্ব চিত্র

সশব্দে: এমন রোশনাইয়ের মধ্যেই সজোরে ফেটেছে শট্‌স। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

পাড়ার কালীপুজো। টানা বৃষ্টি একটু থামতেই মণ্ডপের সামনে অল্পবয়সী ছেলেদের দলটা চঞ্চল হয়ে উঠল। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত দুই প্রবীণ নাগরিক। দু’জনের হাতেই জ্বলছে সিগারেট। চকোলেট বোমা হাতে ছেলের দল আবদার জুড়ল, “দাদু এটা ফাটিয়ে দাও।” হাসতে হাসতে দুই প্রবীণের একজন সিগারেটের আগুন থেকেই সলতে ধরিয়ে চকোলেট বোমা ছুড়ে দিলেন রাস্তার এককোণে। তারপর কানফাটা শব্দ। কেঁপে উঠল চারপাশ।

প্রচার থেকে পুলিশি অভিযান, বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত, ধরপাকড়, এমনকী অঝোর ঝারায় বৃষ্টি— কোনও কিছুই বাধা হল না রেলশহরের শব্দ-তাণ্ডবে। বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই খড়্গপুর শহরের সর্বত্র দেদার শব্দবাজি ফাটল। এক দিকে মানুষের অসচেতনতা, অন্য দিকে শব্দবাজি বন্ধে পুজোর দিন পুলিশি সক্রিয়তার অভাবেই এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিশোর-যুবক থেকে মাঝবয়সী, সকলেই চকোলেট বোমা, শট্‌স, নিষিদ্ধ লঙ্কাপটকা ফাটিয়ে উৎসবে মেতেছেন। পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে প্রশ্রয় দিতেও দেখা গিয়েছে প্রবীণ, বৃদ্ধদের।

কালীপুজোর সন্ধে থেকেই শুরু হয়েছিল শব্দবাজির দাপট। শহরের সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, মালঞ্চ, গোলবাজার, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, কৌশল্যা, তালবাগিচা, নিমপুরা এলাকায় কানফাটা বাজির শব্দে নাজেহাল হতে হয়েছে বাসিন্দাদের। মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়্গপুরে দেওয়ালির জাঁকও যথেষ্ট। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই বাজির বিকট শব্দ কানে এসেছে। ইন্দার বাসিন্দা রেল আধিকারিক অনুপম পালোধী বলেন, “ভাবতে অবাক লাগছে কীভাবে এই বিপুল পরিমাণ শব্দবাজি শহরে ঢুকল। কালীপুজোর সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে পুলিশকে দেখলাম মণ্ডপের ধারে ছাউনিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর পুলিশের নাকের ডগাতেই লাগামছাড়া শব্দবাজি ফাটেছে। কোনও বিধিনিষেধ কার্যকর হয়নি।” সুভাষপল্লির প্রবীণ নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী মিন্টু চৌধুরী বলেন, “আমাদের এলাকায় দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। বৃষ্টির সময় আওয়াজ কিছুটা কমেছে। কিন্তু বৃষ্টি একটু থামতেই চারদিক কাঁপিয়ে ফেটেছে শব্দবাজি।”

নিষিদ্ধ শব্দবাজির এমন বাড়বাড়ন্তে অতিষ্ঠ শহরের বেশিরভাগ নাগরিক। কেন নাগাড়ে বৃষ্টির মধ্যেও শব্দবাজির দাপট রোখা গেল না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন, এত শব্দবাজি কীভাবে শহরে ঢুকল! তা ছাড়া, কালীপুজোর রাতে দেদার শব্দবাজি ফাটা সত্ত্বেও কেউ ধরা না পড়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বারবার চেষ্টা করা হলেও খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীকে এ দিন ফোন ধরেননি। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজো-দীপাবলির অনেক আগেই বিভিন্ন এলাকায় বাজি ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে শব্দবাজি উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু নজর এড়িয়ে অনেকেই নিষিদ্ধ বাজি মজুত করেছিলেন। সেগুলোই ফেটেছে। কিন্তু কালীপুজোর রাতে কাউকে পাকড়াও করা হল না কেন? এক পুলিশ কর্তার দায়সারা জবাব, ‘‘মাঝ আকাশে কে কোথায় বাজি ফাটাল, তা তো আর ধরা সম্ভব নয়।’’

এই অবস্থায় আজ, শনিবার ভাইফোঁটা পর্যন্ত এমন শব্দ-তাণ্ডব সহ্য করতে হবে বলেই আশঙ্কা খড়্গপুরবাসীর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE