মজে গিয়েছে মেদিনীপুর ক্যানাল। ফাইল চিত্র
পণ্য পরিবহণের সুবিধার জন্য বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর থেকে পাঁশকুড়ার ওপর দিয়ে কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদ পর্যন্ত দীর্ঘ খাল খনন করেছিল ইংরেজরা। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মেদিনীপুর মেন ক্যানাল’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেদিনীপুর ক্যানালটি বোরো চাষে সেচের জন্য অন্যতম সহায়ক হয়ে ওঠে। তখন সেচ দফতর ক্যানালের নামকরণ করে মেদিনীপুর সেচ খাল। সেই সময় বোরো চাষের সময় কংসাবতী ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হত ক্যানালে। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ১১২টি মৌজার জমি চাষ হত এই সেচ খালের জলে।
১৯৭৫ সালে সেচ দফতর এই এলাকাগুলিকে সেচ সেবিত হিসেবে ঘোষণা করে। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এলাকার চাষিদের থেকে জমির খাজনা, পূর্ত ও শিক্ষা কর বাবদ অতিরিক্ত হারে কর আদায় শুরু করে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় আশির দশকে। আশির দশকের শুরু থেকেই ক্যানালে কংসাবতী ব্যারাজের জলের জোগান ক্রমশ কমতে থাকে। ১৯৮৪ সালে মেদিনীপুর ক্যানাল দিয়ে বোরো চাষের জল আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কারের অভাবে ক্রমশ মজে যেতে থাকে খালটি। অভিযোগ, ১৯৮৪ সাল থেকে বোরো চাষের জন্য জল আসা বন্ধ হলেও অতিরিক্তি হারে কর আদায় বন্ধ করেনি ভূমি দফতর। এই বিষয়ে ১৯৯৯ সালে সেচদফতরের তৎকালীন রাষ্ট্রমন্ত্রী গণেশ মণ্ডলের সঙ্গে কৃষক সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক হয়। চাষিদের দাবি, ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, চাষিদের অভিযোগের তদন্ত করে জল না আসার ঘটনা সত্য হলে সেচ দফতর ভূমি দফতরকে অতিরিক্ত কর আদায় থেকে বিরত করবে। কিন্তু বৈঠকের পর তৎকালীন রাজ্য সরকার সমীক্ষার জন্য কর্মীর অভাব দেখিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে চাষিদের অভিযোগ।
বছর দুয়েক আগে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ফের একই ইস্যুতে দরবার করে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। কিন্তু সেখানেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি বলে চাষিদের অভিযোগ। কোলাঘাটের কয়াডাঙি গ্রামের চাষি গণেশ সিংহ বলেন, ‘‘বর্তমানে সরকারিভাবে কৃষিজমির খাজনা আদায় উঠে গিয়েছে। কিন্তু সেচ সেবিত এলাকার চাষি হিসেবে এখনও আমাদের অতিরিক্ত হারে পূর্ত ও শিক্ষাকর দিতে হয়। আমরা চাই সরকার এই অন্যায্য কর নেওয়া বন্ধ করুক।’’
বর্তমান সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের দাবি, ‘‘ভূমি দফতর সেচ দফতরকে বিষয়টি জানালে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘বর্তমান সেচমন্ত্রী উল্টো কথা বলছেন। সেচ দফতর আগে সমীক্ষা করে ভূমি দফতরে রিপোর্ট জমা দিলে তবেই সুরাহা হবে।’’ তিনি জানান, সরকার এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না করলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy