গত বছর পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে পুলিশের নজরদারি (বাঁ)। এ বারে প্রশাসন ততটা উদ্যোগী নয় বলে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে নিজে এসে পরীক্ষা করাচ্ছেন। দাসপুরে। ফাইল চিত্র ও কৌশিক সাঁতরা
ট্রেন থেকে নেমে কেউ বাইকে চেপে ঘরে ফিরছেন। কেউ ফিরছেন গাড়িতে। অনেকেই সোজা বাড়ি যাচ্ছেন না। মাঝপথে পাড়ার মোড়ে নেমে হালচাল জেনে নিচ্ছেন। অধিকাংশ বাড়িতে ফিরেও ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকছেন না। দু’-তিন দিন ঘরে থেকেই বেরিয়ে পড়ছেন।
গত বছর অবশ্য ছবিটা এমন ছিল না। লকডাউনের সময়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রথম থেকেই তৎপর ছিল পুলিশ-প্রশাসন। ঘাটাল-পাঁশকুড়া ও ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাস্তার নানা জায়গায় তৈরি হয়েছিল পুলিশের চেকপোস্ট। শুধু ওই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাই নয়, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার সম্ভাব্য অনেক রাস্তাতেই পুলিশের নজরদারি ছিল। এ বার সে সবের কিছুই চোখে পড়ছে না।
গত বছর লকডাউনের আগে ও পরে বাড়ি ফিরেছিলেন এমন পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই এ বার ফেরার পরে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, গত বছর প্রশাসন যতটা তৎপর ছিল এ বার ততটাই নিষ্ক্রিয়। এ বার কোথাও চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। অথচ গত বছর চেকপোস্টগুলিতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি ও পরিযায়ী শ্রমিকদের গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। গ্রামে ফেরার পরে পরিযায়ীদের স্কুল বাড়ি কিংবা বাড়িতে আলাদা রাখার বিষয়ে তৎপর ছিল প্রশাসন। পরিযায়ীরা বাড়িতে পা রাখার পরেই তাঁদের খোঁজ নিতে আসতেন আশা কর্মীরা। ভিআরপির সদস্যরাও সক্রিয় ছিলেন। বাড়ি ফেরা পরিযায়ীদের নাম, পরিচয়, কোথা থেকে ফিরেছেন, কবে ফিরেছেন, জ্বর কিংবা অন্য কোনও উপসর্গ রয়েছে কি না এমন নানা তথ্য নথিভুক্ত করতেন তাঁরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার। কোন এলাকায় কত সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরছেন, তার তথ্যও প্রশাসনের কাছে ছিল কারও উপসর্গ থাকলে তাঁদের নিয়ে গিয়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও প্রশাসনের পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল।
এ বার বাড়ি ফেরার পরে সেসবের কিছুই দেখতে না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশে মনে করাচ্ছেন, আক্রান্তের সংখ্যা গত বারের থেকে এ বার অনেক বেশি। তাঁদের কর্মস্থলেও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। ফলে এ বার প্রশাসনের সক্রিয়তা আরও বেশি দরকার। না হলে সংক্রমণ আটকানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
স্থানীয় নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও পর্যন্ত ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা অন্তত ১৪-১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে মারা গিয়েছেন। কেউ কেউ বাড়ি ফিরেও মারা যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকের বিষয়ে কোনও তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই। আশঙ্কার এটাই শেষ নয়। অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতেই আলাদা থাকার জায়গা নেই। গত বার তাঁদের জন্য স্কুল বাড়ির ব্যবস্থা থাকায় অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বার তা না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। দাসপুরের চকসুলতানের শুকদেব প্রামাণিক ফিরেছেন মুম্বই থেকে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘গত বারের মতো কোথায় কী? মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারও পাইনি।” ছত্তীসগঢ় থেকে ফিরে আসা দাসপুরের কুলটিকরির কমল দোলই বলেন, “পরিযায়ীদের সূত্রে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা প্রশাসনের দেখা উচিত। আরও উদ্যোগী হওয়া জরুরি।”
প্রশাসন অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার কথা মানছে না। দাসপুর- ১ বিডিও বিকাশ নস্কর এবং দাসপুর ২ বিডিও অনির্বাণ সাহু দু’জনেই জানান, যাঁরা ফিরছেন তাঁদের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়েছে। এলাকায় সচেতনতা মূলক প্রচার চলছে। দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আশিস হুতাইতের আশ্বাস, পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় কিছু স্কুল খুলে সেখানে পরিযায়ীদের রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে নজর রয়েছে। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। নথিভুক্তও করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy