Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

হস্টেলের কাজে গতি নেই, ফাঁপরে তফসিলি পড়ুয়ারা

পরিকল্পনা নেই। তাই পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য ‘আশ্রম হস্টেল’ চালু করতে লেগে গেল প্রায় ৫ বছর। তা-ও লক্ষ্যমাত্রায় থাকা সব ক’টি হস্টেল চালু করা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

পরিকল্পনা নেই। তাই পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তফসিলি পড়ুয়াদের জন্য ‘আশ্রম হস্টেল’ চালু করতে লেগে গেল প্রায় ৫ বছর। তা-ও লক্ষ্যমাত্রায় থাকা সব ক’টি হস্টেল চালু করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরেরও গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ। এ বার অবশ্য ৭টি আশ্রম হস্টেল চালুর অনুমোদন মিলেছে। ধীরে ধীরে বাকি ৫টিরও যাতে অনুমোদন আদায় করা যায় সেই চেষ্টাও চলছে বলে দফতরের দাবি।

এই সব আশ্রম হস্টেলে গরিব, তফসিলি ছাত্রছাত্রীরা নিখরচায় থাকা-খাওয়া ছাড়াও একগুচ্ছ সুযোগ পায়। খাট-বিছানা, বছরে একবার পোশাক দেয় সরকার। মেলে চিকিৎসার খরচ। বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। আগে শুধু লোধাদের মতো আদিম উপজাতির পড়ুয়ারা এই সুবিধে পেত। কয়েক বছর হল তফসিলি জাতি-উপজাতির সব ছাত্রছাত্রীই এই সুবিধা পাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক সন্দীপ টুডু বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের মানোন্নয়নেই সরকার এই ব্যবস্থা চালু করেছে।’’

তা-ও কেন আশ্রম হস্টেল চালুতে এত গড়িমসি? এই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। সন্দীপবাবু শুধু বলেন, ‘‘যেগুলির অনুমোদন মিলেছে সেগুলি যাতে ভাল করে চলে সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। আর যেগুলির অনুমোদন মেলেনি কারণ খতিয়ে দেখে সেগুলিরও অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করা হবে।’’

জঙ্গলমহলের এই জেলায় লোধা, সাঁওতালি-সহ বিভিন্ন তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষের বাস। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই কারণেই নিখরচায় তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের থাকা-খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা করতে জেলার ১২টি স্কুলে আশ্রম হস্টেল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। প্রতিটি হস্টেলের পরিকাঠামো নির্মাণে ১৬-২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় ২০১১-১২ অর্থবর্ষে। কিন্তু এখনও ৫টি স্কুলের পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। কোথাও ভবন হলে তৈরি হয়নি মেঝে, কোথাও আসেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। আবার দু’টি স্কুল এখনও ছাত্রছাত্রীদের খরচের আবেদন জানায়নি।

ডেবরার আলোককেন্দ্র হাইস্কুল ও ঝিকুরিয়া বাণী বিদ্যামন্দির, সবংয়ের রামবাড় কন্যা বিদ্যালয়, নারায়ণগড়ের ডহরপুর এপিকেবি বিদ্যাভবনের মতো সাতটি স্কুলে অবশ্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়েছিল বছর দু’য়েক আগেই। কিন্তু সরকারি অনুমোদন না মেলায় তা চালু করা যায়নি। চলতি বছরে সেই সরকারি অনুমোদন মিলেছে। ছাত্র পিছু খাবারের জন্য মাসে ৭৫০ টাকা করে বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু এখনও খাট-বিছানা মেলেনি। বিশেষ কোচিং বা অন্য বন্দোবস্ত হয়নি। জেলার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক বলেন, “আপাতত, ওই হস্টেলগুলি চালু হয়ে গিয়েছে। খাট-বিছানার টাকাও চাওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য যাবতীয় সুবিধে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

আপাতত হস্টেলগুলি চালু হওয়ায় অবশ্য খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রীরা। ঝিকুরিয়া বাণী বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার ভুঁইয়ার কথায়, “আমাদের এলাকা পিছিয়ে পড়া। বাড়িতে পড়াশোনার তেমন পরিবেশ নেই। এ বার ৩০ জন ছাত্র ও ৩০ জন ছাত্রীর থাকার অনুমোদন মিলেছে। ধীরে ধীরে খাট বিছানা ও অন্যান্য সামগ্রীও পেয়ে যাব বলেই আসা করছি।” একই সুরে ডহরপুর এপিকেবি বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার ধাড়ার বক্তব্য, “খাট-বিছানা, বিশেষ কোচিং, কম্পিউটার—সহ সব ধরনের সুবিধে মিলবে বলেও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর জানিয়েছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে আগে ৫২টি আশ্রম হস্টেল ছিল। আরও সাতটির অনুমোদন মেলায় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৯টি। আগে বেশিরভাগই ছিল ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। এ বার জেলার সব প্রান্তের তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের সেই সুযোগ দিতে নতুন হস্টেল করা হচ্ছে। এমন হস্টেলের সংখ্যা আরও বেশি হলে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা উপকৃত হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Hostel Infrastructure Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy