Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শহরে থেকেও প্রান্তিক শিরিষচকের লোধারা

চারপাশে ঘন ঝোপঝাড়। সরু মাটির রাস্তার দু’পাশেও ঘন ঝোপে ভর্তি। নিকাশির বালাই নেই। বৃষ্টি হলেই মেঠো রাস্তায় জল জমে যায়। পথবাতি থাকলেও জ্বলে না একটাও। সাপের ভয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। ঝাড়গ্রাম শহরে থেকেও কার্যত প্রান্তবাসী ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিষচক এলাকার ১১০টি লোধা পরিবার।

ট্যাঙ্ক থাকলেও পানীয় জল নেই (বাঁ দিকে), ঝোপঝাড়ের মাঝে মেঠো পথে সাপের ভয় (ডান দিকে)। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ট্যাঙ্ক থাকলেও পানীয় জল নেই (বাঁ দিকে), ঝোপঝাড়ের মাঝে মেঠো পথে সাপের ভয় (ডান দিকে)। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

চারপাশে ঘন ঝোপঝাড়। সরু মাটির রাস্তার দু’পাশেও ঘন ঝোপে ভর্তি। নিকাশির বালাই নেই। বৃষ্টি হলেই মেঠো রাস্তায় জল জমে যায়। পথবাতি থাকলেও জ্বলে না একটাও। সাপের ভয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। ঝাড়গ্রাম শহরে থেকেও কার্যত প্রান্তবাসী ১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরিষচক এলাকার ১১০টি লোধা পরিবার।

গত বছর বর্ষায় সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছিল এগারো বছরের সোনালি ভক্তা নামে স্থানীয় এক বালিকার। তারপরও হুঁশ ফেরেনি তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার। পরিষ্কার করা হয়নি ঝোপঝাড়। পথবাতির ব্যবস্থাও করা হয়নি। শিরিষচকের সিংহভাগ বাসিন্দা আদিম লোধা-শবর সম্প্রদায়ের। কয়েক ঘর আদিবাসীও আছেন। লোধা পরিবারগুলির অধিকাংশই ঝাড়গ্রাম রেল সাইডিংয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। সব দিন কাজ জোটে না। বাকি সময় দূরের জঙ্গল থেকে শুকনো জ্বালানি ডালপাতা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তাঁরা। দরিদ্র এই এলাকার বাসিন্দারা অনুন্নয়নের আঁধারেই রয়েছেন।

বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, পুরসভার একমাত্র বিরোধী কাউন্সিলর জল্পনা মিদ্যা এই ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই নির্বাচিত হন। জল্পনাদেবী সিপিআই দলের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বিরোধী জনপ্রতিনিধির এলাকায় তাই পুর-পরিষেবার কোনও বালাই নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা গোরাচাঁদ মল্লিক, নরেন ভক্তা, বিষ্ণু মল্লিকদের বক্তব্য, “ঘন ঝোপে বাড়ি ঘর ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। নিজেরা যতটুকু পারি পরিষ্কার করি। কিন্তু গোটা এলাকার ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। বৃষ্টি হলে মাটির রাস্তাটি জল-কাদায় ভরে যায়।” পথবাতি না থাকায় সবচেয়ে সমস্যা হয় রাতের বেলা। স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চায়েত দফতরের কর্মী শ্যামলাল বেসরা বলেন, “পথবাতি গুলো জ্বলে না। বর্ষায় রাস্তায় প্রায়ই সাপ বেরোয়। রাতের বেলা খুব সমস্যা হয়।”

বছর সাতেক আগে তৎকালীন বাম পুরবোর্ডের উদ্যোগে শিরিষচকের বাসিন্দাদের জন্য রিজার্ভার-ট্যাপের মাধ্যমে গভীর নলকূপের পরিস্রুত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সাব মার্সিবল পাম্পটি অকেজো হয়ে রয়েছে। এছাড়া এলাকায় পুরসভার ছ’টি টাইম কল আছে। একটাতেও জল পড়ে না। পুরসভার একটি পাতকুয়ো অবশ্য রয়েছে। বর্ষায় পাতকুয়োর ঘোলা জলই ব্যবহার করতে হয়। মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, “পুর-পরিষেবার অভাবে শিরিষচকের লোধা পরিবারগুলি চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। অথচ ঝাড়গ্রাম পুরসভা একেবারে উদাসীন।”

স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর জল্পনা মিদ্যা মানছেন, শিরিষচকের লোধাপাড়ায় পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এলাকায় ঢালাই রাস্তা প্রয়োজন। পাকা নিকাশি নালা তৈরি করা দরকার। জঙ্গল পরিষ্কারের প্রয়োজন। জল্পনাদেবীর কথায়, “এই সব দাবিতে বহুবার পুর-কর্তৃপক্ষকে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি। কিন্তু শিরিষচকের জন্য কোনও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। ন্যূনতম পুর-পরিষেবা থেকেও বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।” উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহ অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলছেন, “শিরিষচকের সমস্যা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy