ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য ঝাড়গ্রাম, নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরে তিনটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। অথচ তিনটি হাসপাতালেই কার্ডিয়োলজি বিভাগ নেই। নেই কোনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা তৎপর হয়ে ‘রেফার’ করছেন। প্রাণ বাঁচছে রোগীর। কোনও ক্ষেত্রে ‘রেফার’ করার সুযোগও পাচ্ছেন না চিকিৎসকেরা।
কয়েকদিন আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু। বুকে ব্যথা নিয়ে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ইসিজি-র রিপোর্ট দেখে বিধায়ককে কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। না হলে ঝুঁকি ছিল বলে মানছেন চিকিৎসকরা। গত বছর জুনের গভীর রাতে জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট ঝুমুর সঙ্গীতশিল্পী বিজয় মাহাতো গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বিজয়ের চিকিৎসার সুযোগটুকুও পাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে ভর্তি করার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কার্ডিয়োলজি বিভাগ নেই। নেই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। ফলে সঙ্কটজনক অবস্থায় হৃদরোগীরা হাসপাতালে এলে জীবনদায়ী ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধানের কাজটুকু করা হয়। তারপর রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় ১৭৫ কিলোমিটার দূরের কলকাতার সরকারি হাসপাতালে। ঝাড়গ্রামের বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতেও হৃদরোগের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। তাই সঙ্কটজনক হৃদরোগীকে দীর্ঘপথ উজিয়ে কলকাতা নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। দুলাল বিধায়ক হওয়ায় সরকারি ভাবে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে দ্রুত কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুলাল। কিন্তু জঙ্গলমহলের আমজনতার পক্ষে সঙ্কটজনক রোগীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়াটা সহজ নয়। প্রায়ই ‘রেফার’ হওয়া রোগীকে স্থানান্তর করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আবার অত্যন্ত সঙ্কটজনক রোগীকে ‘রেফার’ করা হলেও গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন কার্যত বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখানে কেবলমাত্র বুকে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর ইসিজি এবং ‘ট্রপ টি’ রক্ত পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি-না সেটুকুই খালি বোঝা সম্ভব। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী এক ঘণ্টা হল ‘গোল্ডেন আওয়ার’। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা বেশি কার্যকর হয়। রোগীর হৃদযন্ত্রের কতটা ক্ষতি হয়েছে বা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা কেমন তা বোঝার জন্য ইকোকার্ডিওগ্রাম ও অ্যাঞ্জিওগ্রাম করে দেখা জরুরি। ঝাড়গ্রামের সরকারি কোনও হাসপাতালেই এই ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে অবশ্য ইকোকার্ডিওগ্রাম হয়।
ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে প্রতি মাসে যতজন রোগীর মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বেশিরভাগই হৃদরোগী। ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘হৃদরোগী ভর্তি হলে সিনিয়র ফিজিশিয়নরা দেখেন। সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়া হয়। বাইরে থেকে ইকোকার্ডিওগ্রাম করানো হলে সেই খরচ সরকারি ভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঝাড়গ্রামে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হচ্ছে। সেখানে কার্ডিয়োলজি বিভাগ থাকবে।’’
বাস্তব পরিস্থিতি হল, এখনও মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কাজ সেভাবে শুরুই হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy