অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে ধান। সবংয়ের চাঁদকুড়ির কাছে। নিজস্ব চিত্র
সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৯০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব থেকে বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবংয়ে।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ব্লকগুলি থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৬৯ হাজার বাড়ি আংশিক এবং প্রায় ২১ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব এলাকা থেকে এখনও জল নামেনি। ঘাটালের অনেক এলাকা জলের তলায়। জল নামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘জেলায় অনেকগুলি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ আমপান, ইয়াসেও জেলায় এত সংখ্যক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। প্রশাসনিক সূত্রের মতে, জেলায় সপ্তাহ দুয়েকেরও বেশি দুর্যোগ চলেছে। ভারী বৃষ্টিতে জমা জলে ভিত আলগা হয়ে অনেক বাড়ি ধসে গিয়েছে।
সোমবার মেদিনীপুরে এসে জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী তথা সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি হাতে হাত মিলিয়ে মানুষকে উদ্ধার, ত্রাণ পৌঁছনো এবং বাঁচানোর এই লড়াইটা লড়ছেন। ডিভিসি-র এত জল ছাড়া কোনও দিন হয়েছে? এ কেমন কথা? রাতে জল ছেড়ে দিচ্ছে।’’ মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আবার গালুডি না কি জল ছাড়বে। তখন কেশিয়াড়ি, দাঁতন, মোহনপুর, সবং, পিংলা একেবারে জলে চলে যাবে।’’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল জেলায়। ক্ষয়ক্ষতিরও শুরু সে দিন থেকেই। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে খবর, ব্লকগুলি থেকে এখনও পর্যন্ত যে রিপোর্ট এসেছে সেই অনুযায়ী, সবমিলিয়ে ৯০,৩৩৯টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১,১৪৯টি বাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯,১৯০টি বাড়ি। এ দফায় ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে জেলার ২১টি ব্লক এবং ৭টি পুর- এলাকাতেই। দেখা যাচ্ছে, তুলনায় পুর-এলাকায় বাড়ির ক্ষতি হয়েছে কম।
ঘাটালে ৩টি, খড়ারে ২৮টি, ক্ষীরপাইয়ে ১৬টি, চন্দ্রকোনায় ১০৯টি, রামজীবনপুরে ৫৫টি, খড়্গপুরে ৪৫৩টি, মেদিনীপুরে ২১৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। সবংয়ের বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার দাবি, ১২ বছর পর বন্যা হয়েছে সবংয়ে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগে জেলায় দুর্গতের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হয়েছে ৭,৯৭,৭২৬।
গত বছর আমপান হয়েছিল। এ বছর ইয়াস হয়েছে। তারপরে গত অগস্টে অতিবৃষ্টি হয়। এ বার ফের ভারী বৃষ্টি। এই দুই ক্ষেত্রেই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় ৯,৫৩৯টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮,৮৭১টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬৬৮টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাড়ির ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন এসেছিল ২৩,১৪৪টি। যাচাই-পর্বে অবশ্য দেখা যায়, ২১,১৯২টি আবেদনই ভুয়ো। ১,৯৫২টি আবেদন যথাযথ। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গত অগস্টের অতিবৃষ্টিতেও জেলায় প্রায় ২২ হাজার বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ও প্রায় ১৮ হাজার বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে দফায় বেশি ক্ষতি হয় ঘাটাল, কেশপুরে। ঘাটালে প্রায় ৯,৫০০টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কেশপুরে প্রায় ৫,১০০টি বাড়ি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এ বার ক্ষতিপূরণের কী হবে? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতোই পদক্ষেপ হবে। সরেজমিনে যাচাইয়ে যেতে পারে প্রশাসনিক দল। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলায় ক্ষতিপূরণের খাতে টাকা এলে ছাড়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy