Advertisement
E-Paper

ফের বিধিভঙ্গ, ঢেউসাগর পার্ক ভাঙার নির্দেশ

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার প্রেক্ষিতেই এই নির্দশ। সুভাষ বলেন, ‘‘পার্ক বানানোর নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছিল।

ঢেউসাগর পার্কে। নিজস্ব চিত্র

ঢেউসাগর পার্কে। নিজস্ব চিত্র suvendukamila118809@gmail.com

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৪
Share
Save

নাম রেখেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমি দিয়েছিল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)। তারপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠে সৈকত শহরের আকর্ষণীয় বিনোদন পার্ক ‘ঢেউসাগর’। উপকূল বিধি (কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন বা সিআরজ়েড আইন) না মেনে তৈরি করার দায়ে পার্ক ভেঙে জায়গা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার প্রেক্ষিতেই এই নির্দশ। সুভাষ বলেন, ‘‘পার্ক বানানোর নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছিল। যাত্রানালায় দিঘার স্বাভাবিক জল নিকাশি ব্যবস্থাকে বুজিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছিল। বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ওই এলাকায় কিছুই করা যায় না। মহামান্য পরিবেশ আদালত নির্দেশ সকলের মেনে চলা উচিত।’’ সিআরজ়েড আইন ভাঙার দায়েই মন্দারমণির ১৪৪টি হোটেল-লজ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। দেড় বছর বাদে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে আইনি জট তৈরি হয়েছে। ফলে, ‘ঢেউসাগর’ নিয়েও থাকছে সংশয়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছিল দিঘায়। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, দিঘায় নতুন পার্ক গড়ে উঠবে। তিনিই তার নাম দেন ‘ঢেউসাগর’। নিউ দিঘায় যাত্রানালার ধারে সৈকতের পাশে পার্ক তৈরির জন্য জমি দেয় ডিএসডিএ। প্রথমে এক উদ্যোগপতি দায়িত্ব নেন। পরে বার্ষিক ১০ লক্ষ টাকায় জেলার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পার্ক পরিচালনার চুক্তি হয়। তিনিই রেস্তোরাঁ, ক্যাফে-সহ নানা পরিকাঠামো গড়ে তোলেন।

তবে গোড়া থেকেই অভিযোগ ছিল, উপকূল আইন না মেনে নির্মাণ হচ্ছে। ২০২২ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা হয়। গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় পরিবেশ আদালতের ইস্টার্ন জ়োন (কলকাতা) বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি বি. অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণকুমার বর্মাকে নিয়ে কোরাম গঠিত হয়। ২৫ জানুয়ারি সেই কোরাম নির্দেশ দেয়, সিআরজ়েড- ওয়ান এ এবং নিষিদ্ধ এলাকায় যে নির্মাণ হয়েছে, তা সম্পূর্ণ রূপে সরিয়ে ওই এলাকাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। তিন মাসের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ‘ঢেউসাগর’ পার্ক-সহ একগুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় চার সদস্যের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ও গড়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত। ওই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কোস্টাল জ়োন ম্যানেজমেন্ট অথরিটিকে।

সেই রিপোর্ট বলছে, ঢেউসাগর পার্কে টয়লেট কমপ্লেক্স, দোকানের কয়েকটি তলায় যে সব ঘর বানানো হয়েছে, তার কিছুটা অংশ সিআরজ়েড টু এবং ওয়ান এ এলাকার মধ্যে পড়ে। সেখানে কোনও নির্মাণের অনুমতি ছিল না। পাশে ময়ূরের আদলে তৈরি কংক্রিটের বোটও অনুমোদনযোগ্য নয়। এ ছাড়া কন্টেইনার, কাঠ দিয়ে যেখানে নির্মাণ হয়েছে, সেখানেও নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ। সৈকতের ধারে ঢেউসাগর রেস্তোরাঁ, পার্কের ভেতরে কাচ ও কংক্রিটের তৈরি ফিশ স্পা, খাদ্য ছায়া নামে আরও একটি নির্মাণ— সবই নিষিদ্ধ জায়গায় গড়ে উঠেছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি অবশ্য বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে পাইনি।’’ তবে ডিএসডিএ-র কার্যনির্বাহী আধিকারিক অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আদালত যদি কোনও নির্দেশ দেয়, তা দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}