প্রচার গাড়ি তখন মেদিনীপুরে। সোমবার সকালে। অনুমতি নামেলায় উদ্বিগ্ন রফিক। — নিজস্ব চিত্র।
অশান্তির সিংহভাগ নালিশ তাঁর বিরুদ্ধে। সেই তিনিই শান্তির বার্তা প্রচারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
ভোট গণনার আগের দিন, সোমবার একটি প্রচারগাড়ি বের করতে চেয়েছিলেন কেশপুর খ্যাত মহম্মদ রফিক। তাঁর দাবি, এলাকায় শান্তি বজায় রাখার বার্তা পৌঁছতেই ছিল এই উদ্যোগ। প্রচারগাড়ি প্রস্তুতও হয়েছিল। মেদিনীপুর থেকে সকালে সেটি নিয়ে যাওয়া হয় কেশপুরে। অবশ্য গাড়ি দিনভর তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। গ্রামের পথে বেরোয়নি।
কেন? তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী রফিকের অনুযোগ, পুলিশের অনুমতি মেলেনি। তাই শান্তির বার্তাও পৌঁছনো যায়নি। বিরোধীদের খোঁচা, কেশপুরের অশান্তির নায়ক রফিক শান্তির বার্তা দিলে, সেটা হতনাটকের নামান্তর।
শনিবার ভোটের দিনেও বিতর্কে ছিলেন রফিক। তিনি পৌঁছনোর পরে এলাকায় অশান্তি হয়েছে। রক্ত ঝরেছে, ঘর ভাঙচুর হয়েছে। দু’দশক আগে, ১৯৯৮- ২০০০ সালে কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ ছিলেন এই রফিক। তৃণমূল তৈরির পরপরই কেশপুর, গড়বেতায় সিপিএম-তৃণমূলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর্বেই সামনে আসে রফিকের নাম। এ বার তাঁকে কেশপুরে জেলাপরিষদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ১৯৯-এর পঞ্চায়েত ভোটেও জেলাপরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন তিনি।
এ বার ভোটের দুপুরে কলাগ্রামের উঁচাহারের বুথে গিয়ে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট দেখে মেজাজ হারান রফিক। বিরোধী এজেন্টকে শাসানি দেন, ‘‘এজেন্ট হয়েছো? পাঁচ বছর ঘরছাড়া করে রেখে দেব!’’ এর পরপরই যুযুধানের সংঘর্ষ বাঁধে উঁচাহারে। রক্ত ঝরে। কংগ্রেস, সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাদের নেতা-কর্মীদের উপরই হামলা হয়েছে। বিরোধী জোটের লোকেরা হামলা করেছে। হামলা, পাল্টা হামলায় তপ্ত হয়ে ওঠে গ্রাম। জখমদের উদ্ধার করে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে এখানেও দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। ভোটের দিন কেশপুরের বিভিন্ন এলাকাতেই অশান্তি হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ব্যাপক ভোট লুট এবং সন্ত্রাস করেছে তৃণমূল। একের পর এক বুথ দখল করেছাপ্পা মেরেছে।
আজ, মঙ্গলবার ভোট গণনা। সোমবার কেশপুরে প্রচারগাড়ি বের করতে চেয়েছিলেন রফিক। কেন? রফিক বলছেন, ‘‘আমরা কেশপুরে আর অশান্তি চাই না। মাইকে এই বার্তাই দিতাম। হিংসার রাস্তা ছেড়ে উন্নয়নে শামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাতে চেয়েছিলাম। আমরা কেশপুরকে উন্নততর কেশপুর করতে চাই।’’ রফিকের অনুযোগ, ‘‘প্রচারগাড়ি প্রস্তুত ছিল। পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাই গাড়িটা বের করতে পারিনি।’’
রফিকের প্রতিদ্বন্দ্বী, জেলাপরিষদের সিপিএম প্রার্থী মিনহাজুদ্দিন মল্লিকের খোঁচা, ‘‘কেশপুরে অশান্তির পিছনে তো রফিকরাই।’’ বিজেপি প্রার্থী ইব্রাহিম আলির কটাক্ষ, ‘‘রফিকদের মুখে শান্তির কথা বেমানান!’’ গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুল জব্বর মল্লিকও বলেন, ‘‘এ তো ‘চোরকে বলে চুরি করতে, গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকতে’ বলারমতো হল!’’ কেন প্রচারগাড়ি বের করার অনুমতি দেওয়া হল না? জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমি যতদূর জানি, এমন অনুমতি চেয়ে আবেদন আসেনি।’’ পুলিশের একাংশের ধারণা, এমন প্রচার ঘিরে কিছু এলাকায় বিশৃঙ্খলাও হতে পারত। শান্তির পরিবেশ নষ্ট হতে পারত। রফিক অবশ্য বলছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোটই হয়েছে কেশপুরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy