সবুজ ডানার হাঁস। ছবি সমীক্ষক দলের সৌজন্যে। —নিজস্ব চিত্র।
খুশির খবর আছে। আছে আশঙ্কাও। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার শীতে পরিযায়ী পাখি সে ভাবে আসেনি। তবে ঝাড়গ্রামে এসেছে নানা প্রজাতির শীতের অতিথি। পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় মিলেছে এমন তথ্য। তবে ঝাড়গ্রামের জলাশয় লাগোয়া এলাকাগুলিতে বনভোজন দলের ‘শব্দ তাণ্ডব’ ও খাবারের উচ্ছিষ্ট জলে ফেলার প্রবণতায় পাখিদের বিপদ আছে। এতে অতিথিরা মুখ ফেরাতে পারে, আশঙ্কায় সমীক্ষকেরা।
২০১৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদের তরফে জঙ্গলমহলের পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে বার্ষিক সমীক্ষা হয়। পর্ষদের তরফে এ বছর ওই সমীক্ষক দলের প্রধান হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর কলেজের প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সুমন প্রতিহার। তাঁর নেতৃত্বে মোট ৬ জনের দল পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ষষ্ঠ বার্ষিক সমীক্ষা করেছেন। দলে রয়েছেন প্রাণিবিদ্যার পাঁচ ছাত্র নিলয় মণ্ডল, রাকেশ ঘোষ, পবিত্র মাহাতো, সুভাষ পলমল ও শেখ সলমন আলি।
সুমন জানাচ্ছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, সামাট, শালবনির রাজবাঁধ জলাভূমিতে এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেশ কম। তবে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ঝিল্লি পাখিরালয় এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের কেচেন্দা জলাশয়ে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। সমীক্ষক দলটি ঝিল্লি ও কেচেন্দায় উত্তর আমেরিকার পিয়ং হাঁস (গাডওয়াল) এবং সবুজ ডানার হাঁস (গ্রিন উইং টিল) সহ কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি দেখেছেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঝিল্লিতে পর্যবেক্ষণ করে দলটি। প্রায় তিন হাজারের মতো সরালি (লেসার হুইসলিং ডাক), ১৫টি সবুজ ডানার হাঁস (গ্রিন উইঙ্গড টিল), ৯টি জলমুরগি (মুরহেন), ৩০টি পিয়ং হাঁস (গাডওয়াল), ৪টি কালো ছোট ডুবুরি হাঁস (লিটল গ্রিবে), ১০টি বালিহাঁস (কটন পিগমি গুজ়), উত্তর চিনের প্রায় শ’খানেক সারাং (গ্রে হেডেড ল্যাপউইং), দেখেছেন। দেখেছেন স্থানীয় ৫টি পানকৌড়ি, ৬টি বক, ২টি মাছরাঙা, ৪টি জলপিপি (ব্রোঞ্জ উইঙ্গড জাকানা)।
কেচেন্দার জলাশয়ে দেখা মিলেছে ৮টি পানকৌড়ি, ২০টি বালিহাঁস, ৩০টি সারাং, ৪টি জলপিপি, ১৩টি জলময়ূর (ফেজ়েন্ট টেইলড জাকানা), ১০টি কালো ছোট ডুবুরি হাঁস। তবে কেচেন্দার তুলনায় গোপীবল্লভপুরের ঝিল্লিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেশি।
সুমন জানাচ্ছেন, গাডওয়াল, গ্রিন উইং টিল জলের উপরের অংশ থেকে খাবার সংগ্রহ করে। এরা মূলত, পোকামাকড়, জলজ ঘাস, শর, হোগলা-সহ বিভিন্ন জলজ আগাছার বীজ খুঁজে খেয়ে থাকে। কিন্তু ঝিল্লিতে শীতে বনভোজন করতে আসছেন বহু লোকজন। আসছেন পর্যটকও। তাঁদের খাবারের উচ্ছিষ্ট জলে ফেলা হচ্ছে। পরিযায়ী পাখিদের ছবি তোলার জন্য পর্যটকেরা চিপস-সহ নানা খাবার দিয়ে প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এতে পাখিদের খুঁজে খাবার সংগ্রহের প্রবণতা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও সাউন্ড বক্সের প্রবল আওয়াজে পাখিরা ভয় পাচ্ছে।
সমীক্ষক দলের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর হয়তো পাখির সংখ্যা আরও কমে যাবে। দলটি জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতেও উত্তর চিনের পরিযায়ী সারাং এই জেলাকে পছন্দ করছে। এরা জলাভূমির পার্শ্ববর্তী এলাকায় আস্তানা গাড়ে। তবে ঝিল্লিতে এবার সবচেয়ে বেশি এসেছে সরালি বা গেছো হাঁস। এরা জলে চরলেও বাসা বাঁধে গাছে। দলের সদস্য প্রাণিবিদ্যার ছাত্র নিলয় মণ্ডল ও রাকেশ ঘোষ বলছেন, ‘‘গত বছরের সমীক্ষায় ঝিল্লি জলাশয়ে ৪টি সবুজ ডানার হাঁসের দেখা মিলেছিল। এ বার ১৫টি দেখা গিয়েছে। গত বছরের তুলনায় ঝাড়গ্রামে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বেড়েছে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে পরিযায়ী সংখ্যাটা অত্যন্ত কম। পশ্চিম মেদিনীপুরে এবার সরালি, বালি হাঁস, জিরিয়া ও স্যান্ড পাইপার ছাড়া এখনও পর্যন্ত অন্য বিশেষ পরিযায়ী পাখির দেখা মেলেনি।’’
পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এখনও সমীক্ষা রিপোর্ট হাতে আসেনি। রিপোর্ট এলে সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র ব্যবস্থাপন কমিটিগুলোর মাধ্যমে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy