Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
child education centre

শিক্ষিকা নেই, বন্ধ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র

বিদ্যা চর্চার প্রাথমিক পাঠ থেকে বহু দূরে রাজ্যে শিক্ষায় এগিয়ে থাক পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি-১ ব্লকের মাজিলাপুরের অনেক খুদে পড়ুয়া।

তালা বন্ধ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

তালা বন্ধ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র keshabmanna23@gmail.com

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৯
Share: Save:

শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, চোদ্দো বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষাদান বাধ্যতামূলক। যদিও স্বাধীনতার এত বছর পরেও সব গ্রামে গড়ে ওঠেনি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্বল বলতে ছিল একমাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। কিন্তু সেখানেও ঝুলছে তালা। চলতি শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর প্রায় চার মাস কেটে গিয়েছে। অথচ পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত বহু খুদে পড়ুয়া। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ পড়ার বদলে তারা এখন খেলাধূলায় মগ্ন কেউ কেউ গাছ থেকে আম পাড়ায় ব্যস্ত।

বিদ্যা চর্চার প্রাথমিক পাঠ থেকে বহু দূরে রাজ্যে শিক্ষায় এগিয়ে থাক পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি-১ ব্লকের মাজিলাপুরের অনেক খুদে পড়ুয়া। জেলার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে কাঁথি-১ ব্লকের রঘুসর্দারবাড় জলপাই গ্রাম। মূলত মৎস্যজীবী এবং তপসিলি অধ্যুষিত পরিবারের লোকেদের বাস। সব মিলিয়ে হাজার দেড়েক মানুষ থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে ওই গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। বাম জমানায় একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র তৈরি হয়। সেখানে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনো করত। তারপর তারা ৪ কিলোমিটার দূরের নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলে ভর্তি হত। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের একমাত্র শিক্ষিকা অবসর নেন। তারপর আর নতুন শিক্ষিকা নিয়োগ হয়নি। ফলে বন্ধ হয়েছে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি।

স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, খগেন বেরা বলছেন, ‘‘৬৯টি শিশু ওই শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ত। কিন্তু দিদিমণি অবসর নেওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের সমস্ত ছোট ছোট ছেলে মেয়ে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’’ বাসুদেব মাঝি নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘মেয়ে সবেমাত্র প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। দিদিমণি অবসর নেওয়ার পর স্কুল বন্ধ। পাশের গ্রামে একটি স্কুলে ভর্তি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা অতিরিক্ত ছাত্র নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।’’

ইতিমধ্যেই ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্র অবিলম্বে চালু করা এবং ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যাতে মিড ডে মিল পায় তার জন্য কাঁথি -১ ব্লকের বিডিও র কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকার বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। যে কয়েকটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে অতিরিক্ত শিক্ষিকা রয়েছেন তাঁরা কেউ বদলি হতে রাজি হচ্ছেন না।

অন্যদিকে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র এবং আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিতে নতুন করে শিক্ষিকা ও সহায়িকা নিয়োগ করা হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা জানতে পেরে এলাকার খুদে পড়ুয়াদের নিজেদের উদ্যোগে পড়ানোর জন্য বিকল্প লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই বলেন, ‘‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার অধিকারটুকু যাতে রক্ষিত হয় এবং তারা যাতে মিড ডে মিলের খাবারটুকু পায় তার জন্য যতক্ষণ স্থায়ীভাবে কোনও শিক্ষিকা নিয়োগ না হচ্ছে ততদিন আমাদের স্কুলের এনএসএস ইউনিট থেকে শিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে পড়ানোর বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি। আপাতত ব্লক প্রশাসনের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’

কাঁথি -১ ব্লকের বিডিও তুহিন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যাতে বিকল্প উপায়ে পড়াশোনা সুযোগ পায় তার চেষ্টা হচ্ছে। তবে মিড ডে মিল কী ভাবে পরিচালিত হবে তার জন্য আগামী সপ্তাহে আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠাব। তারপরেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

child education centre Contai Teacher Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy