Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Jhargram

শার্টের ছেঁড়া বোতাম দিয়ে খুনির খোঁজ! মেয়ে বলল, মায়ের পরকীয়ার কথা, সাজা ঝাড়গ্রাম আদালতে

যে জায়গা থেকে পূর্ণিমার দেহ উদ্ধার হয়, সেখানে একটি শার্টের বোতাম পান তদন্তকারীরা। তারও প্রায় দেড়শো মিটার দূরে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া যায়। তার পরেই অভিযুক্তকে আটক করা হয়।

প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২০
Share: Save:

বাড়ি থেকে খানিক দূরে পড়েছিল রক্তাক্ত দেহ। খুবলে নেওয়া শরীর দেখে গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন শেয়ালের কাণ্ড। ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলে আদিবাসী অধ্যুষিত জঙ্গল এলাকায় তা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু নাবালিকা মেয়ের কথাবার্তা থেকে বোঝা গেল, দুর্ঘটনা নয় খুন করা হয়েছে তিন সন্তানের মা পূর্ণিমা মান্ডিকে। গত বছরের ১৮ এপ্রিলের ওই খুনের মামলায় সাজা পেলেন ‘প্রেমিক’ রঞ্জিত মান্ডি। সোমবার ঝাড়গ্রাম আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আসামিকে।

গত বছরের ১৮ এপ্রিল সাঁকরাইলে একটি সর্ষের ক্ষেত থেকে পূর্ণিমার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে, ছুরি বা ছুঁচলো কোনও অস্ত্র দিয়ে খুবলে খুবলে খুন করা হয়েছে পূর্ণিমাকে। ওই ঘটনার দিন দুই পর থানায় অভিযোগ করেন মৃতার স্বামী প্রসেনজিৎ মান্ডি। কর্মসূত্রে ভিন্‌রাজ্যে থাকা প্রসেনজিৎ স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসেছিলেন। নাবালিকা বড় মেয়ের কাছ থেকে প্রসেনজিৎ জানতে পারেন স্ত্রীর পরকীয়ার কথা। বড় মেয়ে বাবাকে জানায়, মায়ের সঙ্গে প্রতিবেশী যুবক রঞ্জিতের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এক বার মায়ের সঙ্গে ওই প্রতিবেশীকে বাড়িতেই ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেছিল সে। তার পর থেকে মা ওই সম্পর্ক থেকে বেরোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তার পরই মায়ের দেহ উদ্ধার হল সর্ষের ক্ষেতে। অন্য দিকে, ছোট মেয়ে বাবাকে জানায় মৃত্যুর দু’দিন আগেও সে দেখেছে যে মাকে শাসাচ্ছেন রঞ্জিত। দুই মেয়ের মুখে এই পুরো ঘটনা শুনে থানায় ছুটে যান প্রসেনজিৎ। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।

যে জায়গা থেকে পূর্ণিমার দেহ উদ্ধার হয়, সেখানে একটি শার্টের বোতাম পান তদন্তকারীরা। তারও প্রায় দেড়শো মিটার দূরে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া যায়। তার পরেই অভিযুক্তকে আটক করা হয়। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তকারীরা রঞ্জিতের বাড়িতে তল্লাশি চালান। সেখানে একটি শার্ট পাওয়া যায়, যার একটি বোতাম নেই। মিলিয়ে দেখা যায়, সর্ষের ক্ষেতে পাওয়া বোতামটি ওই শার্টেরই। এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায় পুলিশ। এর পর শুরু হয় টানা জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযুক্ত স্বীকার করে নেন যে পূর্ণিমা সম্পর্ক ভেঙে বোরোতে চাইছিলেন। সেই রাগেই প্রেমিকাকে খুন করেছেন তিনি।

অন্য দিকে, ওই গ্রামের মোড়ল পুলিশকে জানান, রঞ্জিত তাঁর কাছে গিয়ে নিজের অপকর্মের কথা খুলে বলেছিলেন। তিনি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরামর্শ দিতেই ফুঁসে ওঠেন রঞ্জিত। তাঁকেও খুন করবেন বলে হুমকি দেন। তাই প্রথমে সব জেনেও ভয়ে চুপ ছিলেন ওই মোড়ল।

টানা তদন্তে উঠে আসে খুনের আগে পূর্ণিমার সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে রঞ্জিতের শার্টের একটি বোতাম ছিড়ে গিয়ে পড়ে ক্ষেতে। পুলিশ সেটাই পেয়েছিল। তা ছাড়া ঘটনার সময় মৃতা এবং অভিযুক্তের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়ে যান অভিযুক্তকে নিয়ে। সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ২২ দিনের মধ্যেই রায় ঘোষণা করেন ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতের বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়। সরাকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব কম সময়ের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আসামির সাজা হয়েছে। এটা একটি নজির।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Murder Case Lifetime Sentence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy