শুভ্রদীপ প্রধান।
২০১৫ সালের ১৯ জুলাই কোলাঘাটে একটি সুইমিং পুল থেকে উদ্ধার হয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেধাবী ছাত্র শুভ্রদীপ প্রধানের দেহ। ছেলেকে খুন করা হয়েছে, দাবি জানিয়ে শুভ্রদীপের পরিবারের তরফে ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু ও তাঁর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে কোলাঘাট থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্তদের পরিবারের অবশ্য দাবি ছিল, জলে ডুবে মৃত্যু হয় শুভ্রদীপের। ঘটনায় তিন মূল অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও চার্জশিট না দেওয়ায় ৮৯ দিনের মাথায় জামিন পেয়ে যায় অভিযুক্তেরা। কিন্তু তার পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়নি। এই অবস্থায় ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন বাবা।
শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা শুভ্রদীপ কোলাঘাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তাঁর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল কোলাঘাটের পাইকপাড়ির বাসিন্দা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের। ঘটনার দিন ভাস্করের জন্মদিনে তাঁর বাড়ি যান শুভ্রদীপ। সেদিন দুপুরে ভাস্কর, তাঁর দাদা, ভাই ও জ্যাঠার সঙ্গে কোলাঘাট বিডিও অফিস সংলগ্ন সুইমিং পুলে স্নান করতে যান শুভ্রদীপ। দুপুর আড়াইটা নাগাদ শুভ্রদীপের বাড়িতে তাঁর জলে ডুবে যাওয়ার খবর পৌঁছয়। ঘটনায় ভাস্কর, তাঁর জ্যাঠা ও জ্যাঠার ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শুভ্রদীপের জলে ডুবে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন চিকিৎসক। যদিও রিপোর্টে পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মন্তব্যের অংশের অসঙ্গতি থাকায় তমলুক সিজেএম আদালতে ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর ধৃতদের জামিন নাকচ হয়। মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পর্যবেক্ষণে লেখা ছিল মৃতের মাথার পিছনে দুটি পেরেকের দাগ ছিল। ফুসফুসেও জল ছিল না। এমনকী দেহে কোনও রোগও ছিল না। এই পর্যবেক্ষণের পর কী ভাবে জলে ডুবে মৃত্যুর কথা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মন্তব্য হিসেবে লেখা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুভ্রদীপের পরিবার। কিন্তু তারপরেও পুলিশ চার্জশিট না দেওয়ায় ঘটনার ৮৯ দিনের মাথায় ধৃতেরা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে যান।
মৃতের পরিবারের দাবি, সেই সময় পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে শুধু মন্তব্যকে তুলে ধরে কলকাতা হাইকোর্টে ‘মিসটেক অফ ফ্যাক্টস’ হিসাবে মামলাটি নিষ্পত্তির ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু তমলুক আদালতে মৃতের পরিবার মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে আপত্তি জানান।
মৃৃতের পরিবার সূত্রে খবর, ঘটনার মাস খানেক আগে ৩ লক্ষ টাকা চেয়ে শুভ্রদীপের বাবার কাছে ফোন আসে। টাকা না দিলে ছেলেকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়। শুভ্রদীপের বাবা কোলাঘাট থানায় অভিযোগ করেন। টাকার জন্যই শুভ্রদীপকে খুন করেছে ভাস্কর ও তার পরিবার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার কোলাঘাট থেকে যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা যাওয়ার সময় শুভ্রদীপের বাবা কৃষ্ণেন্দু প্রধান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদনপত্র দিতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই আবেদনপত্র নেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ খুনটাকে জলে ডুবে মৃত্যু বলে চালাতে চাইছে। আমার ছেলে সাঁতার জানতো। কী করে সে ডুবে যেতে পারে?’’ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দোষীরা শাস্তি পাবে, এটাই আশা মৃত ছাত্রের পরিবারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy