Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কবে সমিতির বোর্ড গঠন, নীরব মমতা

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি পদ্মফুলের দখলে যায়। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টি পায় বিজেপি। যদিও ফলাফল নিয়ে অভিযোগ তুলে ধুন্ধুমার বেধেছিল গত ১৭ মে।

বিশ্বসিন্ধু দে
কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেন। নেতা-কর্মীদের একাংশের ‘ভুল’ স্বীকার করে নিলেন। ‘ভুল’ না বোঝার আবেদনও করলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি গঠন নিয়ে কিছু বললেন না কেন? সোমবার কেশিয়াড়ির তেলিপুকুর মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক জনসভার পর এমনই প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

এ দিন খড়্গপুরের কৌশল্যায় এক অনুষ্ঠান শেষে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তৃণমূল তাই সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের লোক ভাঙাতে এই সভা করছে।’’

প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কেটে গিয়েছে একশো সত্তরদিন। তবু কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করতে পারেনি বিজেপি। প্রশাসনের দাবি, আইনশৃঙ্খলা জনিত কারণেই স্থগিত রাখা হয়েছে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন। এ দিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বি়জেপির অভিযোগ, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হতে পারে সেখানে কী করে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি পদ্মফুলের দখলে যায়। ২৫টি আসনের মধ্যে ১৩টি পায় বিজেপি। যদিও ফলাফল নিয়ে অভিযোগ তুলে ধুন্ধুমার বেধেছিল গত ১৭ মে। ফল গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে বিজেপি। পুলিশ জমায়েত সরিয়ে দেয়। ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কেশিয়াড়িতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, জনসভার প্রস্তুতিতে রবিবার রাতে কেশিয়াড়ি বাজার এলাকায় পতাকা লাগাচ্ছিলেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা গিয়ে কয়েকটি পতাকা খুলে ফেলেন। সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হয় পোস্টার। সেই পোস্টারে লেখা ছিল, ‘কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করছ না কেন? গণতন্ত্র হত্যাকারিণী স্বৈরাচারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গো ব্যাক’। অভিযোগ, এরপরই বিজেপির ওই পোস্টার ছিঁড়ে দেন তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরা। ফের বিজেপির তরফ থেকে পোস্টার ও পতাকা লাগাতে এলেই উত্তেজনা ছড়ায় দু’পক্ষের মধ্যে। পুলিশ দু’পক্ষকে এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপি সমর্থকেরা রাত ৯টা নাগাদ কেশিয়াড়ি দক্ষিণ মণ্ডল দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পথ অবরোধ করে। কেন পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করা হবে না—এই দাবি তোলা হয়। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। বিজেপির অভিযোগ, অবরোধ তুলতে গিয়ে তাঁদের সমর্থকদের মারধর করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। বিজেপির মহিলা মোর্চার দক্ষিণ মণ্ডল সভাপতি কৃষ্ণা সাউয়ের বক্তব্য , ‘‘দলীয় কার্যালয়ে ছিলাম। হঠাৎ এসে মারধর করা হয়। কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না। কেন পুলিশ মারবে?’’ যদিও মারধরের অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ। শুধু বাজার এলাকা নয়। ‘মুখ্যমন্ত্রী গো ব্যাক’ সংবলতি পোস্টার এ দিন সকালে দেখা গিয়ে‌ছে ভীমমেলা, পাঁচিয়াড়, খাজরা-সহ বিভিন্ন এলাকায়। তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য (আমিলাসাই বুথে) তারাপদ দণ্ডপাট এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তাঁকে মারধর করা হয়। নাম না করে যে ঘটনার উল্লেখ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পবিত্র শীট বলেন, ‘‘ঘটনাক্রম থেকে বোঝা যাচ্ছে জয়লাভের পর এলাকায় মারধর চালাচ্ছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় না যাওয়ার হুমকি দেওয়া হল। পোস্টার দেওয়া হল। এসবই তো আইনশৃঙ্খহীনতারই নামান্তর।’’

ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদ, জেলা শাসক ও শুভেন্দু অধিকারীকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। বিজেপির কটাক্ষ, কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুখে কিছু বলেননি। তবে যা বোঝানোর বুঝিয়েছেন ইঙ্গিতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE