Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
চোখের বালিতেই ‘ডুবলেন’ গড়বেতার আশিস

ভারসাম্য অঙ্কে বর্ষায় শিউলি

জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

এক দিকে ভর্ৎসনা করে ভুল-ত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া, অন্য দিকে নতুন মুখের দায়িত্ব বৃদ্ধি। জোড়া অস্ত্রেই হারানো তালুক পুনরুদ্ধারের বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। ফলাফল বিশ্লেষণ ও জয়ে ফেরার কৌশল নির্ধারণেই কলকাতায় জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। সেখানেই বালি খাদান নিয়ে নেত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েন গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী। ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। উত্তরার ডানাও ছেঁটেছেন মমতা। মহিলা তৃণমূলের জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে মমতা ওই দায়িত্ব দিয়েছেন কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহাকে। তাঁকে রাজ্য মহিলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকও করা হয়েছে।

জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পরে বালি পাচার রোখার বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এ দিন গড়বেতার বিধায়ক আশিসকে মমতাও না কি বলেছেন, ‘‘বালি খাদান নিয়ে ব্যস্ত ছিলিস। তাই গড়বেতার এমন ফল হল। শুধু নিজে সৎ হলে হবে না। তিন-চারজন এমন লোককে নিয়ে ঘুরিস, যারা বালি ছাড়া কিছু জানে না। বালিই তোকে ডুবিয়েছে। রিকভারি তোকেই করতে হবে।’’ আর উত্তরাকে নেত্রীর পরামর্শ, ‘‘তোর মুখটা (মুখের ভাষা) ঠিক কর। লোকের সঙ্গে ভালভাবে কথা বল।’’ উত্তরাকে জেলা পরিষদে বেশি সময় দিতেও বলেছেন নেত্রা। আশিস ও উত্তরা দু’জনেই বলছেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ মেনে চলব।’’ ‘কাজ না করায়’ ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন নারায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষও।

দলে শিউলির এই গুরুত্ববৃদ্ধি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে জেলার রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলে একটা সময় মুকুল রায়ের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন শিউলি। পরে কেশপুরে জিতলেও দলে তাঁর গুরুত্ব ছিল না। কেশপুরে ঢুকতে তৃণমূলেরই ব্লক সভাপতি তাঁকে বাধা দিচ্ছেন বলে সরব হয়েছিলেন শিউলি। পরে মমতার নির্দেশে ফের কেশপুরে যেতে শুরু করেন। গুরুত্ব বাড়িয়ে শিউলিকে তৃণমূলের এসসি সেলের জেলা কার্যকরী সভাপতি করেন মমতা।

এখন জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শুভেন্দু-শিউলির সংঘাত পুরনো। বস্তুত, অধিকারী গড় থেকে সরিয়ে এনেই পাশের জেলার বিধায়ক করা হয়েছিল শিউলিকে। এ বার তাঁকে জেলার মহিলা সংগঠনের দায়িত্ব দিয়ে মমতা কার্যত দলের অন্দরে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। শিউলি বলেন, ‘‘নেত্রী নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। শুভেন্দুদা জেলার পর্যবেক্ষক। শুভেন্দুদার সঙ্গে কথা বলেই জেলায় মহিলা সংগঠনের কর্মসূচি নেব।’’

জেলার মাথায় যে এক এবং একমাত্র শুভেন্দুই, এ দিন তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। সকলকে বলেছেন, যে কোনও বিষয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলতে। জেলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংয‌োগ যাত্রায় আসার পরে পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে কিছুটা অনীহা দেখাচ্ছিলেন শুভেন্দু। এ দিন অবশ্য শুভেন্দুর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বেই সিলমোহর দিয়েছেন মমতা।

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ছিলেন দীনেন রায়। দীনেন তৃণমূলেরও জেলা চেয়ারম্যান। এ দিন মমতা দীনেনকে সরিয়ে আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি করেছেন নির্মল ঘোষকে। নির্মল জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। তবে অজিত মাইতিই তৃণমূলের জেলা সভাপতি থাকছেন। মমতা বলেছেন, ‘‘অজিতের নেতৃত্বে কোর কমিটি থাকবে। কোর কমিটি নিয়মিত বৈঠকে বসবে।’’ কমিটিতে থাকছেন সাংসদ, বিধায়ক, জেলা চেয়ারম্যান, শাখা সংগঠনগুলোর জেলা সভাপতিরা। অমূল্য মাইতি ‘দলের পুরনো কর্মী’ বলেও জানিয়েছেন মমতা। সেই সঙ্গে আশিস-সহ দলের সব নেতাকেই মানুষের দুয়ারে পৌঁছনোর বার্তা দিয়েছেন নেত্রী।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত বলেন, ‘‘নেত্রীর দেখানো পথেই সবাই মিলে কাজ করব।’’ এলাকা অশান্ত থাকায় বৈঠকে যাননি গড়বেতার ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘দলের নির্দেশেই এ দিন আমরা গড়বেতায় ছিলাম।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Shiuli Saha West Midnapore TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy