সুজিত বায়েন। নিজস্ব চিত্র
হস্টেল থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে গেল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সোমবার রাতে পরিবারের তরফে ঘাটাল থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি।” ঘটনার জেরে ঘাটাল থানার ওসি সুজায় লায়েককে ক্লোজ করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
ঘাটাল শহরের সৎসঙ্গ শ্রী যুক্তেশ্বর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ছাত্র সুজিত বায়েন হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করত। স্থানীয় জলসরা হাইস্কুলে মাধ্যমিকের সিট পড়েছিল চন্দ্রকোনার বৈকণ্ঠপুরের বাসিন্দা সুজিতের। তার সহপাঠীরা জানিয়েছে, সোমবার সকাল ১০টা ৫মিনিট নাগাদ পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য হস্টেল থেকে বেরোয় সে। তদম্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে গেলেও কিছুক্ষণ পর তাকে ফোন করতে করতে ঘাটাল বাজারের দিকে যেতে দেখেন স্থানীয় কয়েকজন। স্কুলের দিকে না গিয়ে সুজিত কেন বাজারের দিকে যাচ্ছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রথমদিন পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন সুজিতের দাদা অরিজিৎ। ওই দিন সকালে ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল দাদার। অরিজিৎ বলছিলেন, “জামা পরার সময় আমাকে বলেছিল, জামাটা ছেঁড়া।আমি বলেছিলাম অন্য জামা আসতে। পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে আমার একটু দেরি হয়। ফলে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়নি।” পরীক্ষা শেষের পর ভাইকে দেখতে না পেয়ে অরিজিৎবাবু বিষয়টি স্কুলকে জানান। শুরু হয় খোঁজখবর। রাতে থানায় অপহরণের অভিযাগ হয়। সোমবার রাত এবং মঙ্গলবারে কয়েকদফা ফোন পেয়েছেন সুজিতের পরিবারের সদস্যেরা। তবে কোনও ফোনেই মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি। এ দিন সুজিতের বাবা অনুকূল জানান, ছেলের ফোন প্রায় সারাক্ষণই সুইচড অফ ছিল। সোমবার রাত ২টো পঞ্চান্নের সময় ছেলে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করে। ফোনে ছেলে শুধু এটুকু জানিয়েছে, তাকে কে, কী ভাবে, কোথায় এনেছে সে ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারছে না। এটুকু কথা বলার পরই ফোন কেটে দেয় ছেলে। এরপর ফের সুইচড অফ হয়ে যায় মোবাইল। এ দিন সকালেও কয়েকবার এক বন্ধুর মোবাইলে সুজিতের মোবাইল থেকে ফোন আসে। এক মহিলা ও পুরুষ কণ্ঠ পৃথক ভাবে জানায়, বসিরহাটে রয়েছে তারা। কখনও বেলেঘাটা আবার কখনও ডেবরায় থাকার কথা জানানো হয়। একবার বলা হয়েছিল, তারা রয়েছে ঘাটাল পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড কলোনিতে। সোমবার সকালে সুজিতের সঙ্গে দেখা হয়েছিল দুই শিক্ষকেরও। চিন্ময় চৌধুরী এবং পার্থ সেন নামে ওই দুই শিক্ষক বলেন, “সোমবার সকালে উঠেই সুজিত পড়াশোনা করছিল। সময় মতো স্নান সেরে খেয়ে নেয়। দশটার পর বেরোবে বলে জানিয়েছিল। ঠিক সময়েই বেরিয়ে ছিল।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরীশঙ্কর বাগের কথায়, “স্কুলের তরফে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশকে সহযোগিতা করা হবে। আমরা চাই, ছাত্রটি ফিরে আসুক।”
তদন্তে নেমে পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গেই কথা বলেছে পুলিশ। স্কুলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ক’দিন ধরে একটি মেয়ে তাকে উত্যক্ত করত। স্কুলের এক শিক্ষকের অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কেও বাড়িতে জানিয়েছিল সুজিত। নিখোঁজ মাধ্যমিক পড়ুয়ার বাবার সঙ্গে কারও কোনও ব্যবসায়িক গোলমাল ছিল কি না, স্কুল থেকে বেরিয়ে সুজিত কার সঙ্গে কথা বলেছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নজর রাখা হচ্ছে মোবাইলের কললিস্ট এবং টাওয়ার লোকেশনের উপরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy