Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জেলা হাসপাতালে কারা কাজ করবেন বলে দেন ঠিকাদারই

রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়েছিল এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ। সেই সব পোস্টারে কেউ বা কারা আলকাতরা লেপে দেয়। বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের অভিযোগ, খাবার সরবরাহকারী সংস্থার মালিকের সঙ্গে শাসক দলের সুসম্পর্ক রয়েছে।

পোস্টারে আলকাতরা। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

পোস্টারে আলকাতরা। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়েছিল এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ। সেই সব পোস্টারে কেউ বা কারা আলকাতরা লেপে দেয়।

বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের অভিযোগ, খাবার সরবরাহকারী সংস্থার মালিকের সঙ্গে শাসক দলের সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই কারণেই জনস্বার্থে তোলা অভিযোগের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। ফের দ্বিগুণ উৎসাহে বাম সংগঠনের উদ্যোগে হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।

বাম সংগঠন দু’টির অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের যাবতীয় কাজের বরাত কেবলমাত্র একজন ঠিকাদারই পেয়ে থাকেন। সুভাষ দাস নামে ওই ঠিকাদার বাম আমল থেকে দীর্ঘ কয়েক দশক হাসপাতালের চোখের মণি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের তিন বেলা খাবার সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন সুভাষবাবু। এছাড়া সুপারের অফিসের গাড়ি, হাসপাতালের অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী, চত্বরের অস্থায়ী সাফাই কর্মী, হাসপাতালে জেনারেটর, সিসিইউ-এর জন্য দশজন অস্থায়ী সাফাই কর্মীএ সবই টেন্ডারের মাধ্যমে বছরের পর বছর সরবরাহ করে চলেছেন সুভাষবাবু। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনের জন্য ২০ জন অস্থায়ী কর্মী সরবরাহের বরাত পেয়েছেন তিনিই।

সুভাষবাবু কারও সঙ্গে ঝামেলায় যান না। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে শহর তৃণমূলের নেতাদের একাংশের সঙ্গে সুভাষবাবুর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। তৃণমূলের সভা-সমাবেশে নিয়ম করে হাজির হন তিনি। ভোটের সময় শাসক দলের প্রচারেও তিনি পরোক্ষে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন বলে খবর। এত কিছুর পরেও রোগীদের খাবারের মান ও চত্বরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মাঝে মধ্যেই সোচ্চার হন স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ।

ঝাড়গ্রাম পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কল্লোল তপাদার এ বিষয়ে বহুবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কয়েকদিন আগে হাসপাতালের খাবার নিয়ে প্রশ্ন তোলায় চিকিৎসাধীন এক বৃদ্ধকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে সুভাষবাবুর সংস্থার এক ঠিকা-কর্মীর বিরুদ্ধে। পরে বহিরাগত লোকজন হাসপাতালে ঢুকে ওই কর্মীকে মারধর করেন। বহিরাগতদের দলে তৃণমূলেরও কিছু সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার পরে এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি বামেরা। এরপরই হাসপাতাল চত্বর জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়ে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ একযোগে খাবারের নিম্ন মান ও অপরিচ্ছন্ন হাসপাতাল চত্বর সম্পর্কে অভিযোগ তোলে।

ডিওয়াইএফ-এর ঝাড়গ্রাম শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মিদ্যা বলেন, “হাসপাতালে সুভাষবাবুর মৌরসিপাট্টা চলছে। তালিকাভুক্ত খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যত সে সব কিছুই রোগীদের দেওয়া হয় না। সুভাষবাবুর সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সুসম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে অভিযোগ করেও লাভ হয় না। প্রতিবাদ জানালে গেলে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।” বামেদের অভিযোগ, তৃণমূলের একাংশ সুভাষবাবুর পাশে থাকায় দিনের পর দিন অনিয়ম চলছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে সুভাষ দাস বলেন, “১৯৮৫ সাল থেকে হাসপাতালে খাবার, জেনারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, গাড়ি সরবরাহ করছি। পরে টেন্ডারের মাধ্যমে আরও দায়িত্ব পেয়েছি। এ ছাড়া জেলার ডেবরা, শালবনি, গড়বেতা, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুরের মতো একাধিক হাসপাতালে গত তিনদশক যাবত রোগীদের খাবার, জেনারেটর, জঞ্জাল সাফাই ও অস্থায়ী কর্মী সরবরাহ করছি। আমি যদি নিম্ন মানের পরিষেবা দিতাম তাহলে কী রাজ্য সরকার আমাকে এই সব দায়িত্ব দিত?”

তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্লোল তপাদার কিছু সমাজবিরোধীকে হাত করে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছেন। সব শুনে তৃণমূলের কাউন্সিলর কল্লোলবাবুর কটাক্ষ, “তাহলে সুভাষবাবু সাধুপুরুষ আর আমি চোর।”

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “খাবার নিয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। ঠিকাদারকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE