সাংসদ তহবিলের টাকায় তৈরি হয়েছে পথবাতি। নিজস্ব চিত্র
বছর খানেক আগের কথা। খন্দে ভরা সড়কের ধারে একটি জীর্ণ বাড়িতে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রশ্ন করতেই ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন এক যুবক। বাইরে বেরিয়ে এসে তাঁর স্ত্রী বলেছিলেন, “স্বামী খেতে বসেছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।” বছর ঘুরেছে। এ বার লোকসভা নির্বাচনের পালা। এখন ওই পাড়ায় গিয়ে ভোট নিয়ে আলোচনা শুরু করতেই এগিয়ে এলেন রবিন হাঁসদা, লক্ষ্মী মান্ডিরা। বললেন, “এই পাড়ার কেউ আমরা পাকাবাড়ি পাইনি। পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারেনি অনেকে। এ বার ভোটে বাড়ি না পাওয়ার যন্ত্রণা বুঝিয়ে দেব।”
ঘটনাস্থল পিংলা বিধানসভার ধনেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোগলানিচকের। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে কথা বলতে না চাওয়া মানুষরা এ বার এগিয়ে এসে খোলামেলা কথা বলছেন। তুলে ধরছেন নিজেদের দুর্দশার কথা। বিজেপির আশা, মানুষের ক্ষোভই এ বার পদ্ম ফোটাবে। আর পিংলায় তৃণমূলের আস্থা পাটিগণিতেই। পিংলা ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও খড়্গপুর-২ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত পিংলা বিধানসভা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ২০১৪ লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। ২০১৬-এর বিধাসভা ভোটে শাসকের জয়ের ব্যবধান ছিল ২৪ হাজারের বেশি। ভোট শতাংশের হিসেবেও এখানে বিশেষ বৃদ্ধি হয়নি বিজেপির। ২০১১সালের বিধানসভায় প্রায় ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিগুণ বেড়ে ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। তবে ২০১৬সালের বিধানসভাতেও সেই ৮ শতাংশেই আটকে থাকতে হয়েছিল তাদের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও পিংলা ব্লকে তৃণমূল অধিকাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। তবে খড়্গপুর-২ ব্লকে কয়েকটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল জয়ী হলেও ২টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। তবে এ বার পিংলায় প্রচারে এসে বিজেপি প্রার্থী ভারতী বলেছেন, “পিংলায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপিকে মনোনয়ন জমা করতে দেওয়া হয়নি। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তৃণমূল। ভোট লুট করেছে। এ বার মানুষ এর জবাব দেবে।” বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাসে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি। আমাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। ভোট হয়নি পিংলায়। এ বার ভোট দিতে না পারা ভোটারেরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট দেবে। তাতেই আমাদের জয় নিশ্চিত।”
শাসকদল এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পিংলার তৃণমূল বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “আমার বিধানসভায় আমরা ৪০ হাজার লিড দেব। গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু আসনের কথা ছেড়ে দিলাম। জেলা পরিষদে তো বিজেপি প্রার্থী ছিল। মানুষ ভোটও দিয়েছে। কিন্তু আমরাই জিতেছি। কয়েকটি জায়গায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে আমাদের দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে বিজেপি দাগ কেটেছিল। সেই মান-অভিমান মেরামত হয়েছে। এবার বিজেপি মুছে যাবে।” শাসক দল যে পাটিগণিতের উপরেই ভরসা রাখছে তা স্পষ্ট হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারীর (দেব) কথায়। পিংলার দুজিপুরের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে দেব বলেছেন, “আপনারা যদি পাশে না থাকতেন তা হলে হারিয়ে যেতাম। যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছিলেন বা কোনও কারণে দিতে পারেননি তাঁদের থ্যাঙ্ক ইউ।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোনও বড় প্রকল্প নয়, সেতু, জলপ্রকল্প, পথবাতির মতো ছোট প্রকল্পকে হাতিয়ার করেই প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। এর পাশাপাশি রয়েছে মানুষের বঞ্চনার অভিযোগ ও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আবার খড়্গপুর-২ ব্লকের প্রান্তিক এলাকা বেনাপুরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক জ্যোতিন্দ্রনাথ দাসের কথায়, “এ বার যদি মানুষ সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে ফল অন্যরকম হবে। স্থানীয় নেতাদের অনেক মানুষ পছন্দ করে না। এলাকার উন্নয়ন হয়নি। দেবও গত ৫বছরে আমাদের এলাকায় আসেনি। এগুলি বিচার করেই মানুষ ভোট দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy