নন্দকুমার ব্লকে তাঁদের দ্বন্দ্ব কারও অজানা নয়। দলের একাংশের কাছেও যা নিয়মিত চর্চার বিষয়। দলের পদাধিকারী থেকে পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাই নিয়ে সেই দ্বন্দ্বের ছবি সামনে এসেছে বার বার। কিন্তু খোদ তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভাও তাঁদের সেই দূরত্ব ঘোচাতে পারল না। নন্দকুমারের দুই তৃণমূল নেতা সুকুমার দে ও সুকুমার বেরার কোন্দলের আঁচ পড়ল রবিবার তমলুকের কুমোরগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাতেও।
সুকুমার দে নন্দকুমারের বিধায়ক তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি। আর সুকুমার বেরা জেলা তৃণমূল সমবায় সেলের সহ-সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি। শাসক দলের দুই নেতার ঠান্ডা লড়াই এখন প্রকাশ্যে। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে সেই লড়াই অন্যমাত্রা পায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাওয়া নিয়ে দু’জনের অনুগামীদের পৃথকভাবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টায়। দলীয় সূত্রে খবর, সুকুমার বেরার অনুগামী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা জেলা তৃণমূল সমবায় সেলের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে হাজির হয়েছিলেন সভায়। ওই সমবায় সেলের ব্যানারেই ২৬টি বাস-সহ চারটি ট্রেকার ও তিনটি ছোট লরিতে নন্দকুমার ব্লক এলাকা থেকে প্রায় হাজার খালেক তৃণমূল কর্মী- সমর্থক হাজির হয়েছিলেন বলে সুকুমার বেরার দাবি। অন্যদিকে সুকুমার দে’র অনুগামীরাও পৃথকভাবে বাস ও অন্যান্য গাড়িতে সভায় হাজির হন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
লোকসভা ভোটের সময় একটি ব্লকে শাসকদলের দুই নেতার এমন ঠান্ডা লড়াই ভোটের বাজারে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। এদিন সভাস্থলে দেখা গিয়েছে, তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীদের সমর্থনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় ‘কুমোরগঞ্জ চলো’ লেখা ওই পরিচয়পত্রে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সমবায় সেলের নাম। তাতে সমবায় সেলের সভাপতি গোপাল মাইতির নাম। গোপালবাবু তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত তমলুক-ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং সুকুমার বেরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে সুকুমার বেরা ও গোপালবাবুর নেতৃত্বে নন্দকুমারের ঠেকুয়া বাজার থেকে খঞ্চি বাজার পর্যন্ত পদযাত্রা হয়েছিল। সেদিনই নন্দকুমার বাজারে বিধায়ক সুকুমার দে’র নেতৃত্বে মিছিল হয় ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে। দুই সুকুমারের এমন প্রকাশ্যে পৃথক মিছিলের আয়োজন শাসকদলের কোন্দলকে সামনে এনে দিয়েছিল সেদিনই। যার বদল ঘটল না মুখ্যমন্ত্রীর সভাতেও ।
এদিন সমবায় সেলের দেওয়া ব্যাজ পরে কুমোরগঞ্জে সভায় এসেছিলেন নন্দকুমারের পুয়াদা এলাকার গীতা জানা ও জয়দীপ চক্রবর্তী। গীতাদেবী বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূলের সমর্থক। সুকুমার বেরাকে নেতা হিসেবে মেনে চলি। সভায় আসার জন্য তিনি গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন।’’
অনুগামীদের জন্য পৃথকভাবে গাড়ির ব্যবস্থা করার কথা স্বীকার করে সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল কর্মী। তবে এলাকার বিধায়কের সঙ্গে মতের মিল নেই। তাই দলের সমবায় সেলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় এসেছি।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর সভার পরে বিধায়ক সুকুমার দের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি।