ঝোলি এলাকায় ভাঙচুর করা হয় বাড়িও। নিজস্ব চিত্র
জমি এবং ঠিকা কাজ নিয়ে দু’পক্ষের বিবাদ। দু’পক্ষই প্রকাশ্যে তৃণমূল করে। বিবাদ মেটাতে দু’পক্ষকেই রবিবার ডেকেছিলেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিবাদ তো থামেনি উল্টে একপক্ষ বিপক্ষের দিকে বিজেপি ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ করে।
এখানেই শেষ নয় পুরপ্রধানের কাছ থেকে এলাকায় ফিরে গিয়ে শুরু হয় মারপিট। একপক্ষ বিপক্ষের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছে। খড়্গপুর শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝোলি এলাকার ওই ঘটনায় দু’পক্ষের চারজন আহত হয়েছে। পুলিশের দাবি, গুলি চালানোর কোনও প্রমাণ মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, জমি ও হিজলি রেল স্টেশনে ঠিকা শ্রমিকের কাজ নিয়ে ঝোলি এলাকার অবাঙালি বাসিন্দাদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। একদিকে রয়েছে শিব শঙ্কর ওরফে নান, অন্যদিকে রেলকর্মী হংসরাজ শঙ্কর। দু’পক্ষই প্রকাশ্যে তৃণমূল। শিব শঙ্করের অনুগামীরা রেল স্টেশনে ঠিকা কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। আবার হংসরাজের অনুগামীরা এখন হিজলি স্টেশনে কাজে ঢুকতে চায়। তাদেরকেও শাসক দলের কর্মসূচিতে দেখা যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকায় বেড়েছে বিজেপির ভোট। তাই নিয়ে দু’পক্ষ একে-অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। সংঘর্ষে জখম শিব শঙ্করের ভাইপো সাহিল শঙ্করের অভিযোগ, “স্টেশনে কাজ নিয়ে গোলমাল রয়েছে। আসলে হংসরাজ, গুল্লুরা বিজেপিতে যুক্ত। পুরপ্রধান ডাকায় আমরা দু’পক্ষই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সেখানেই গোলমাল শুরু। এর পরেই রাতে এলাকায় ফিরে ওরা বাড়ি ভাঙচুর করে। গুল্লু আমার পায়ের উরুতে গুলি করে।” যদিও হংসরাজের পাল্টা অভিযোগ, “আমি কোনও রাজনীতি করিনা। গুল্লু তৃণমূলে যুক্ত। মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বরং ওরা এলাকায় তরোয়াল, পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।”
রবিবার রাতের সংঘর্ষে সাহিল ছাড়াও আরও তিনজন জখম হয়েছে। শিবশঙ্কর শিবিরের থাকা শিবা শঙ্কর ও হেমন্ত শঙ্কর তরোয়ালের আঘাতে জখম হয়েছে। সাহিল-সহ তাদের তিনজনকে প্রথমে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার হয়। সেখান থেকে সাহিলকে ‘রেফার’ করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। তরোয়ালের আঘাতে জখম ধর্মরাজ শঙ্কর হংসরাজের অনুগামী হিসেবে পরিচিতি। ধর্মরাজ ভর্তি রেল হাসপাতালে। সাহিলের পরিবার হংসরাজ শঙ্কর, রাজেশ শঙ্কর ওরফে গুল্লু-সহ ৮জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। অন্যদিকে ধর্মরাজের পরিবার সাহিল শঙ্কর, শিবা শঙ্কর ওরফে নান-সহ ৭জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “জমি-সহ এলাকার নানা বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের গোলমাল থেকে এই ঘটনা। ঘটনার আগে দু’পক্ষ পুরপ্রধানের কাছে গিয়েছিল বলে শুনেছি। দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে গুলি চলেনি বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।” ধন্দে রয়েছেন হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মধুসূদন গুপ্তও। তিনি জানিয়েছেন, এক্স-রে ও এমআরআই রিপোর্ট দেখে গুলিতে জখম কিনা বোঝা যাবে।
পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “ওই অবাঙালি এলাকায় ভাল ফল করতে আমি দু’পক্ষকে মানস ভুঁইয়ার হয়ে প্রচারে নামানোর জন্য আলোচনায় ডেকেছিলাম। কিন্তু ওরা একে-অন্যকে বিজেপি, কংগ্রেস বলে দাবি করায় অশান্তি হয়। পরে শুনলাম সংঘর্ষ হয়েছে এলাকায়।” বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাস বলেন, “হিজলি স্টেশনে শ্রমিক নিয়োগের সিন্ডিকেট নিয়ে এই সংঘর্ষ। তৃণমূলের উপর থেকে নিচু তলা অবিশ্বাস রয়েছে সর্বত্র। ওই ঘটনা তৃণমূলের লুটেপুটে খাওয়ার রাজনীতির জের।” যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “এটা পাড়াগত সমস্যা নিয়ে দু’পক্ষের গোলমাল। বিজেপি এটাতে রাজনীতির রং দিচ্ছে। আমাদের দলে কোনও অবিশ্বাস ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy