সুকুমার হাঁসদা।—ফাইল চিত্র
লকডাউনে দু’মাসেরও বেশি এলাকায় দেখা যায়নি ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদাকে। বয়সের কারণে করোনা-বিধি মেনেই তিনি ঘরবন্দি রয়েছেন বলে বিধায়কের দাবি। তবে এই সঙ্কট-কালে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিধায়ক তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি বলে দলেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
শনিবার কলকাতা থেকে সংবাদমাধ্যমের গুটিকয় প্রতিনিধির সঙ্গে সুকুমার ভিডিয়ো বৈঠক করার পরে এই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। জানা যাচ্ছে, প্রশান্ত কিশোর টিমের পরিকল্পনায় এ দিন সকালে কলকাতা থেকে ভিডিয়ো সাংবাদিক বৈঠক করেন বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার। করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের সদর্থক ভূমিকা প্রচারেই এই উদ্যোগ। এ দিনই ঝাড়গ্রামের লোধাশুলিতে দলীয় কার্যালয়ে আর এক বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো ও কয়েকদিন আগে ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন। অথচ সুকুমার কলকাতা থেকে ভিডিয়ো বৈঠক করায় অসন্তুষ্ট দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশই।
সুকুমারের অনুগামী এক তৃণমূল কর্মী জানালেন, এ দিন ঝাড়গ্রামে বিধায়কের আসার কথা ছিল। বিকেলে জনসংযোগের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিধায়ক জানিয়ে দেন, তিনি এখন ঝাড়গ্রামে আসবেন না। কেন? ফোনে সুকুমারের জবাব, ‘‘আমার বয়স ৬৬ বছর। করোনা-কালে বয়স্কদের সাবধানে থাকতে হবে। তাই কলকাতায় ঘরবন্দি আছি। তবে জেলায় ও বিধানসভা এলাকায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। কে, কী বলল তাতে কিছু এসে যায় না।’’জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেনও বলেন, ‘‘অসুস্থতার জন্য কলকাতায় গিয়ে লকডাউনে সুকুমারবাবু আটকে পড়েছিলেন। এ দিন তাঁর ঝাড়গ্রামে এসে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ছিল। তবে সম্ভবত অসুস্থতার কারণে উনি ভিডিয়ো অ্যাপে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন।’’
গত ১৫ মার্চ কলকাতায় চিকিৎসা করাতে যান সুকুমার। আর ঝাড়গ্রামে ফেরেননি। লকডাউনে শাসকদলের উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনও কর্মসূচিতেই সুকুমার ছিলেন না। সুকুমারের বিধানসভা এলাকার এক দলীয় কর্মী বলেন, ‘‘জেলার সব স্তরের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা গত দু’মাস ধরে নানা কর্মসূচি করছেন। অথচ আমাদের বিধায়ক একবারের জন্যও আসননি। এলাকাবাসীর কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। বিরোধীরা অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সুকুমারদা বিধায়ক হিসেবে লকডাউন পর্বে কিছুই করলেন না। এখন উনি সুস্থ। কিন্তু আসার কথা বললেই বলছেন, রেড থেকে গ্রিন জ়োনে যাওয়া ঠিক নয়।’’
সুকুমারের বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে ঝাড়গ্রাম শহরের ১৮টি ওয়ার্ড, ঝাড়গ্রাম ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং লালগড় ব্লকের দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত। লালগড় ব্লকের দহিজুড়ি ও বিনপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস। রমজান মাসে সংখ্যালঘুদের ফল বিতরণ, দরিদ্রদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, কমিউনিটি কিচেনের মাধ্যমে রান্না করা খাবার বিলির কোনও উদ্যোগেই তিনি ছিলেন না বলে অভিযোগ। কয়েকদিন আগে আমপানের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ভিডিয়ো বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলাশাসক আয়েষা রানির কাছে জানতে চান, ‘ওখানে সুকুমারদা আছেন?’ জেলাশাসকের জবাব ছিল, উনি আসেননি। গত ২৩ মে জেলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন সুকুমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy