Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

রাস্তার উপরেই সংসার, মরা মাছে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

চিংড়ি মাছ মরে জলে ভেসে উঠছে। এর ফলে এলাকায় দুর্গন্ধও ছাড়াচ্ছে।

শৌলার কাছে মেরিন ড্রাইভে রাস্তার উপরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

শৌলার কাছে মেরিন ড্রাইভে রাস্তার উপরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

‘‘ঘরেই ছিলাম গো। এক প্রতিবেশী ছুটতে ছুটতে এসে বলল সমুদ্রের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। তারপর পড়িমড়ি করে ছুটতে ছুটতে বাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তার আসি।’’

সেই থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাস্তাতেই সংসার পেতেছেন সত্তরোর্ধ্ব অনন্ত বেরা। মঙ্গলবার রাস্তায় বসেই গত বুধবারের ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর জেরে জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ার অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন কাঁথি-১ ব্লকের রঘুসরদারবাড় গ্রামের ওই প্রবীণ বাসিন্দা। ঝড়ের প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলেছে। কিন্তু অনন্ত শৌলা থেকে বগুড়ান জলপাইর দিকে যাওয়া মেরিন ড্রাইভের এক পাশে কালো ত্রিপলের নীচে দিন কাটাচ্ছেন। অন্তত বলছেন, ‘‘একটাই ধুতি পরে এসেছিলাম। এখনও সেই কাপড়েই পরে।’’

পাশেই আরেকটি ত্রিপলের ছাউনি। রাস্তার দিকে চেয়ে বসে ছিলেন এক মহিলা। দু’পাশে বসে খেলছিল দুটো বাচ্চা। ত্রাণ নিয়ে কেউ সেখানে পৌঁছেছে কি না সে দিকেই নজর মহিলার। কারণ ঘরের সঙ্গে খাবারদাবারও তো গিয়েছে ভেসে। জিজ্ঞেস করতেই ওই মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘একমুঠো শুকনো মুড়ি খেয়ে দু-দিন কাটিয়েছি। তারপর এক দিন একটু খিচুড়ি পেয়েছিলাম। কিন্তু দুটো ছেলেকে না দিয়ে কীভাবে নিজে খেতে পারি!’’

মেরিন ড্রাইভের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এখনই ছবি। সেখানে রাস্তার ধারে রয়েছে একের পর এক ত্রিপলের তৈরি তাঁবু। রাস্তার এক পাশে আশ্রয় নিয়েছেন শয়ে শয়ে এই অসহায় মানুষগুলো। আর উল্টো দিকে দিকে শুধু জল আর জল। অস্থায়ী ছাউনিতে আশ্রয় নেওয়া লোকেদের অনেক মাছ চাষি। তাঁরা জানাচ্ছেন, দূরের জলে ঢাকা এলাকাগুলো বাগদা চিংড়ির চাষের ভেড়ি। জলোচ্ছ্বাসে সব কিছুই ভেসে গিয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে জল কিছুটা সরেছে। এখন চিংড়ি মাছ মরে জলে ভেসে উঠছে। এর ফলে এলাকায় দুর্গন্ধও ছাড়াচ্ছে। তাতে সেখানে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ওইসব লোকেদের।

জল তো সরে গিয়েছে, তবু বাড়ি ছেড়ে এখানে কেন!

প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন বললেন, ‘‘বাড়ির যা হাল সেখানে গেলেই বিপদ। তারপর দুর্গন্ধে জীবন বাঁচানো মুশকিল।’’ এ দিন কাঁথি-১ ব্লকের মোট পাঁচটি ত্রাণ শিবিরে ২,২০০ জন ছিল বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

ওই সব বাসিন্দাদের পাশে ব্লক প্রশাসন রয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বিডিও। কাঁথি-১ এর বিডিও তুহিনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আবহাওয়া এবং পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যেসব জায়গায় জল কমেছে, সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়ি পৌঁছনোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy