রঞ্জিৎ দত্ত। নিজস্ব চিত্র।
বই পড়ার অভ্যাস কমে যাচ্ছে-এই প্রচলিত আক্ষেপকে তিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। নিজের আশি বছরের পঠনপাঠনের জীবনে এখনও প্রতিদিন নিয়ম করে খবর কাগজ পড়া, টেলিভিশন দেখার পাশাপাশি ডুব দেন নানা গল্প-উপন্যাস থেকে অর্থনীতির বইয়ের পাতায়। রাজ্য সরকারের গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগারের সেরা পাঠক হিসেবে পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে। তিনি রঞ্জিত দত্ত।
তমলুক শহরের রামসাগর পুকুর সংলগ্ন টাউন পদুমবসানের বাসিন্দা দীর্ঘকায় রঞ্জিতবাবু একসময় চাকরি করতেন জেলা প্রশাসনের অফিসে করণিক পদে। ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে বি কম পাশ রঞ্জিতবাবুর প্রথম থেকে বই পড়ার নেশা। তাই অবিভক্ত মেদিনীপুরের তমলুকে ১৯৫৫ সালে জেলা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছর পরে তিনি যে গ্রন্থগারের সদস্য পদ নিয়েছিলেন তা এখনও রেখেছেন। গ্রন্থাগারে শুধু সদস্য পদ রাখাই নয়, নিয়মিত জেলা গ্রন্থগারে এসে পড়ার জন্য নানা বিষয়ের বই নিয়ে যান বাড়িতে। আর অবসরে সেই বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বুঁদ হয়ে যান।
জেলা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, আশি পার হওয়ার পরও রঞ্জিতবাবু গত এক বছরে জেলা গ্রন্থাগার থেকে ১১১ টি বই নিয়ে গিয়ে পড়েছেন। তারই স্বীকৃতি হিসাবে জেলা গ্রন্থাগারে আয়োজিত গ্রন্থাগার দিবস উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হলেন গ্রন্থাগারের সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য রঞ্জিতবাবু। অনুষ্ঠানে গ্রন্থগারে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দিন আসা পাঠক কমল বাড়কে সেরা নিয়মিত পাঠক এবং গত এক বছরে সবচেয়ে বেশী ১৪৫ টি বই নিয়ে গিয়ে পড়া সোনম দে’কে পুরস্কৃত করা হয়।
তবে সব কিছুর মধ্যমণি ছিলেন রঞ্জিৎবাবুই। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত ঋজু এই বৃদ্ধ এখনও আগ্রহী দেশ-বিদেশের অর্থনীতি, ধর্ম বিষয়ক বই থেকে হালফিলের বাংলা সাহিত্য নিয়ে। কাদের লেখা বই পড়েন বেশি? রঞ্জিতবাবুর উত্তর, ‘‘আগে পড়তাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদারের লেখা। এখন সুচিত্রা ভট্টাচার্য, স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর লেখা ভাল লাগে।’’ বাড়িতে থাকেন স্ত্রী মনিকা দেবী ছাড়াও তাঁদের দুই ছেলে-বউমা। দুই ছেলে চাকরি করেন। দুই মেয়েও চাকরি করেন। তবে পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝেও নিজের পড়ার জন্য সময় করে নেন একনিষ্ঠ পাঠক রঞ্জিতবাবু।
পাঠক কি সত্যিই কমে যাচ্ছে? রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘পড়ার অভ্যাস কমছে এটা ঠিক। তবে সাহিত্যের মানও আগের চেয়ে কমেছে। মানব জীবনের গভীরতা সাহিত্যিকরা সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন কই? তবে আমি পড়া ছাড়ব না।’’
এমন পাঠক পেয়ে খুশি জেলা গ্রন্থগারিক বিদ্যাধর মুদলিও। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা গ্রন্থগারে এখন সদস্য ৫ হাজার ১০০ জন। তাঁদের মধ্যে রঞ্জিতবাবু শুধু বয়সে বা সদস্য হিসেবে প্রবীণ নয় পাঠক হিসেবে আমাদের গর্বের সদস্য। অনুষ্ঠানে রঞ্জিতবাবুকে স্বীকৃতি অন্য পাঠকদের উৎসাহিত করবে বলে আশা করছি।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ মৈত্র, তমলুকের মহকুমা শাসক শুভ্রজ্যোতি ঘোষ, তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy