স্ত্রী পাপিয়ার সঙ্গে প্রদীপ সরকার। নিজস্ব চিত্র
বেটার হাত ধরেই বদলে গেল রেলশহরের ৪২ বছরের ইতিহাস।
বেটার হাত ধরেই ২১ বছর পর স্বপ্নপূরণ হল জোড়াফুলের।
রাজ্যে যারা শাসক, খড়্গপুর তাদের পাশে থাকে না। বাম আমলের শুরু থেকে চলা সেই ট্র্যাডিশন ভেঙে দিলেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। ৪২ বছর পর গড়লেন ইতিহাস। জন্মের ২১ বছর পর বেটা প্রদীপের হাত ধরেই রেলশহরে জিতল তৃণমূল। বিজেপির রাজ্য সভাপতির ‘গড়’ বলেই পরিচিত খড়্গপুর। সেই খড়্গপুর সদর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ২১ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হলেন প্রদীপ। হারালেন বিজেপি প্রেমচন্দ ঝাকে। ভোট বাড়ালেন প্রায় ১৮ শতাংশ।
সকাল ৮টায় গণনার শুরুতে ছিল ফটোফিনিশ। সমানে সামনে টক্কর প্রেমচন্দ আর প্রদীপের। কিন্তু পঞ্চম রাউন্ড থেকেই ব্যবধান বাড়াতে শুরু করেন প্রদীপ। রাজনৈতিক মহলের একাংশও মনে করছিলেন, রেলশহরে এ বার লড়াই হবে কঠিন। সেখান থেকে ২১ হাজারের বেশি ব্যবধান। নেপথ্যে কারণ কী? উঠে আসছে নানা সম্ভাবনা।
তৃণমূলের একাংশ বলছেন, প্রথম এবং প্রধান কারণ অবশ্যই প্রদীপের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি। পুরপ্রধান। তার উপর খেলার মাঠের লোক। প্রদীপ প্রতিদিনের জনসংযোগে কয়েকশো মাইল পিছনে ফেলেছেন প্রতিপক্ষকে। ক্লাবগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ ভাল প্রদীপের। সে সুবিধাও পেয়েছেন তিনি। এমনকি, বিজেপি প্রভাবিত ক্লাবগুলির সদস্যদের একাংশের সমর্থনও ছিল তাঁর দিকে। এ প্রসঙ্গে জয়ী প্রার্থী বলছেন, “আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ভোট পাওয়ার পিছনে কারণ এটা ঠিক। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজ পুরসভার মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। সেখানে দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হলেও হারতেন। কারণ, শুভেন্দুদা যেভাবে বারবার এসে সকল কর্মী চাঙ্গা করেছেন, মানুষকে বুঝিয়েছেন তার সুফল মানুষ এ বার পেল। আসলে এই জয় মানুষের জয়।”
প্রথম থেকেই প্রচারে বিরোধীদের টেক্কা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। টিম পিক বেঁধে দিয়েছিল স্লোগান—‘নেতা নেহি, বেটা হ্যায়’। সেই স্লোগানে ভর করেই ঘরে ঘরে গিয়েছেন প্রদীপ। ফ্লেক্স, ব্যানারেও প্রচার ছিল নজরকাড়া। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী বারবার শহরে এসে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি, দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে যতটা কমিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু। তৃণমূলের সব নেতাকে একসঙ্গে মাঠে নামিয়ে প্রচার করিয়েছেন তিনি।
ভোটের ফলের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণে ব্যস্ত বিরোধীরা। তার সবটা এখনও স্পষ্ট না হলেও প্রাথমিক ভাবে যা ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট—এলাকাগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভোট গিয়েছে শাসক দলের দখলে। যেমন তালবাগিচা অঞ্চল। উদ্বাস্তু কলোনি। পুরসভার প্রায় ৩টি ওয়ার্ড জুড়ে রয়েছে এই এলাকা। এখান থেকে ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েছেন প্রদীপ। পাঁচবেড়িয়া। খড়্গপুর গ্রামীণ ঘেঁষা এই এলাকার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের অধিকাংশই পকেটে পুরেছেন তৃণমূল প্রার্থী। রেলের ওয়ার্ড। তেলেগু ভাষাভাষি মানুষের বাস। এতদিন যা গেরুয়া শিবিরে ভোটব্যাঙ্ক বলে পরিচিত ছিল তা এ বার ঢলে পড়েছে শাসক শিবিরে দিকে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছেন, রেলের বেসরকারিকরণ, স্বেচছাবসর প্রকল্প চালু বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে।
জমি সংক্রান্ত নানা মামলায় জড়ানো প্রার্থী নিয়ে আগাগোড়া অসন্তোষ ছিল বিজেপির অন্দরে। ফল থেকে স্পষ্ট, তা সে অসন্তোষ ডালপালা মেলেছে ইভিএমে। ঘটনার কথা কার্যত স্বীকার করেই দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “হয়তো লোকে আমাকে দেখে বিগতদিনে ভোট দিয়েছে। সেই তুলনায় এ বার হয়তো আমাদের প্রার্থী অনেকের পছন্দ হয়নি। কারণ, আমি মাফিয়ারাজের বিরুদ্ধে লড়াই করে খড়্গপুরে শান্তি এনেছি। কিন্তু লোকসভা আসনে থেকে আমার পক্ষে তো ওই আসনে লড়াই সম্ভব নয়।” বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীর শিক্ষাগুরু তথা জোটপ্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। স্যর ভোট কাটায় তাতে সহজ হয়েছে ছাত্রের পথ।
প্রদীপের ‘গ্যারান্টার’ হয়েছিলেন শুভেন্দু। তিনি বলছেন, ‘‘তৃতীয় থেকে দলকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া এ- তো আমি আগেই করেছি। মুর্শিদাবাদের পরে খড়্গপুরে সেটাই হল। এটা দলের জয়।’’
গ্যারান্টারের হাত ধরেই বেটা প্রদীপ জ্বাললেন রেলশহরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy