শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
সামনে ছিলেন দুই প্রার্থী। তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। বিজেপির প্রেমচন্দ ঝা।
কখনও প্রকাশ্যে, কখনও মেঘের আড়ালে লড়ছিলেন দু’জন। শুভেন্দু অধিকারী। দিলীপ ঘোষ।
যুদ্ধ শেষ। রেলশহরে দিলীপের খাসতালুকেই তাঁকে মাত করলেন শুভেন্দু। উপ-নির্বাচনের লড়াই জিতে ২০২১ এর বিধানসভার ফাইনাল ম্যাচে এগিয়ে রইলেন কাঁথির অধিকারী পরিবারের মেজো ছেলে।
লড়াই যে শুভেন্দু বনাম দিলীপের তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রচারপর্বে। শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আমি প্রদীপের গ্যারান্টার।’’ দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আমিই তো প্রার্থী।’’ খড়্গপুরে ‘গড়’ আগলে রাখা যেমন দিলীপের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল, তেমন এখানেই বিজেপিকে পরাস্ত করা শুভেন্দুর কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। ভোটের দিন খড়্গপুরে ছিলেন দিলীপ। তাঁর থাকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। আপত্তি তুলেছিল তৃণমূল। দিলীপ অবশ্য খড়্গপুর ছেড়ে যাননি। পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছিলেন। দলীয় সূত্রে খবর, খড়্গপুরের ভোটের দিকে নজর রেখেছিলেন শুভেন্দুও। কোথায়, কত ভোট পড়েছে, সে খবর পৌঁছে গিয়েছে তাঁর কাছে। দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশও না কি দিয়েছিলেন শুভেন্দু। ভোটের দিন ছিলেন না। গণনার দিনও আসেননি। তবে আজ, শুক্রবার রেলশহরে বিজয় মিছিলে থাকার কথা শুভেন্দুর।
লোকসভা ভোটের নিরিখে খড়্গপুরে বিজেপির থেকে ৪৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই খড়্গপুর ‘পুনরুদ্ধারে’ প্রথম থেকেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছিলেন শুভেন্দু। জুন মাসে খড়্গপুরে ওয়ার্ড ভিত্তিক দলীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেন। এরপর বারবার রেলশহরে ছুটে এসেছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ওয়ার্ডে গিয়ে নিয়মিত বৈঠক করেছেন ওই পর্যবেক্ষকেরাও। চেষ্টার খামতি ছিল না দিলীপেরও। প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে, এটা আঁচ করেই বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে লাগাতার আলোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ। প্রচারেও তুঙ্গে ওঠে লড়াই। দিলীপ বলেন, ‘‘ওরা (তৃণমূল) পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এক মাফিয়াকে এনেছে। সে না কি ওদের ভোটে জিতিয়ে দেবে।’’ শুভেন্দুর পাল্টা, ‘‘ওর (দিলীপ) পরিবারের কেউ তো স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। আমার পরিবারের ছিলেন।’’ প্রচারে দিলীপ বলতেন, ‘‘রাজ্য ও পুরসভায় তৃণমূল। তাই বিধায়ক হিসেবে কাজে বাধা পেতে হচ্ছে। তহবিলের টাকা নিচ্ছে না পুরসভা।’’ শুভেন্দুকে পাল্টা বলতে শোনা যায় ‘‘রাজ্য ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। খড়্গপুর পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। সুতরাং বিধানসভা উপ-নির্বাচনেও তৃণমূলকে জেতান।’’
ভোট শেষে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর কথাতেই সিলমোহর দিয়েছেন দিলীপ। বলছেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল। পুরসভাতেও ওরা। তাই মানুষ বিধায়ক হিসেবে হয়তো ওদের চেয়েছে।’’ তা হলে কি মেনে নিলেন শুভেন্দুর কথা? জবাবে দিলীপ ফিরেছেন তাঁর তহবিলের টাকা না নেওয়ার অভিযোগে। আর শুভেন্দুর কথায়, ‘‘জুন থেকে আমরা খড়্গপুরে কাজ শুরু করি। সংগঠক হিসেবে কাজ করেছি। ৫৪ জন পর্যবেক্ষক -সহ দলের নেতাকর্মীরা যে ভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন সে জন্যই এই জয়। এই জয় মানুষের জয়।’’ দিলীপকেও বিঁধে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভোটের দিনে এ কে ৪৭- এর ঘেরাটোপে থেকে মানুষের কাছে পৌঁছনো যায় না! মানুষ এমন জনপ্রতিনিধি চান না।’’
লোকসভায় দুই ভূমিপুত্রের লড়াই দেখেছিল মেদিনীপুর। সেবার মানস ভুঁইয়াকে হারিয়েছিলেন দিলীপ। এ বার আরেক ভূমিপুত্রের কাছে হারলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাজনীতি তো টেস্ট ম্যাচ। হেরে যাওয়া মানে হারিয়ে যাওয়া নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy