Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

রেলশহরে চুপকথা

এই শহরে নির্বাচনে কখনও রক্ত না ঝরলেও অশান্তির আঁচ পেয়েছে শহরবাসী। উঠেছে ছাপ্পা থেকে সংঘর্ষের অভিযোগ। গত লোকসভা নির্বাচনেও শহরের খরিদা হিতকারিনী বিদ্যালয়ে ছাপ্পার অভিযোগ ঘিরে সংঘর্ষ দেখা গিয়েছিল।

পাঁচবেড়িয়ার একটি বুথে ভোটারদের লাইন সামলাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান। নিজস্ব চিত্র

পাঁচবেড়িয়ার একটি বুথে ভোটারদের লাইন সামলাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২১
Share: Save:

মাস ছ’য়েক আগেই হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। সংঘাত থেকে ছাপ্পা— অভিযোগের বহর সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রশাসনকে। রেলশহরে বরাবর নির্বাচন ঘিরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে শহরবাসীর। এ বার বিধানসভা উপ-নির্বাচন। তৃণমূল-বিজেপি দুই যুযুধান দলের রাজনৈতিক তরজায় অশান্তির আশঙ্কা ছিল। তবে সোমবার থমথমে শহরে অন্যরকম ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন দেখল শহরবাসী। এ তবে কীসের ইঙ্গিত? উত্তর খুঁজছে খড়্গপুর।

এই শহরে নির্বাচনে কখনও রক্ত না ঝরলেও অশান্তির আঁচ পেয়েছে শহরবাসী। উঠেছে ছাপ্পা থেকে সংঘর্ষের অভিযোগ। গত লোকসভা নির্বাচনেও শহরের খরিদা হিতকারিনী বিদ্যালয়ে ছাপ্পার অভিযোগ ঘিরে সংঘর্ষ দেখা গিয়েছিল। উত্তেজনা ছড়িয়েছিল রেলের এলাকাগুলিতেও। এ বার উপ-নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে লম্বা লাইন দেখা না গেলেও ভোটদানের হার বেড়েছে স্বাভাবিক গতিতে। দু’একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা ছড়ালেও নিমেষে শান্ত হয়েছে এলাকা। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও জটলা দেখা যায়নি। যেখানে জটলা হয়েছে, সেখানে দু’পক্ষের জমায়েতে পরিস্থিতি মোকাবিলা হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের ধারনা, অতীতে বিরোধীদের উপর হামলা চালিয়ে ফল যে বুমেরাং হয়েছে তা বুঝেই এ বার সংঘাতে যায়নি তৃণমূল। আবার বিজেপিও অধিকাংশ বুথ আগলানোর চেষ্টা চালিয়েছে। লড়াই হয়েছে সমানে-সমানে। পক্ষপাতিত্ব হলে শাসকদল তৃণমূলের জন্য ফল বুমেরাং হবে আঁচ করে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য কৃতিত্ব পুলিশকে দিতে চাননি। দিলীপের কথায়, “পুলিশ তো শাসকদলের হয়েই কাজ করেছে। এর কৃতিত্ব আমাদের ছেলেদের। কারণ তাঁরা মাঠে নেমে তৃণমূলকে প্রতিরোধ করেছে।” তবে এই শহরে অনেকদিন ধরে নির্বাচন দেখছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে। তাঁর কথায়, “এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা অস্বীকারের জায়গা নেই। তবে এটুকু বলতে পারি দু’টি দলই একে-অপরকে ভয় পেয়েছে। তাই কেউ সংঘাতে যায়নি।” আবার শহরের বাসিন্দা কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস ঘোষ বলেন, “মানুষ তৃণমূল ও বিজেপির ওপর তিতিবিরক্ত। তাঁরা কংগ্রেসকে নীরবে ভোট দিয়েছে। অশান্তি করলে পরিস্থিতি বুমেরাং হতে পারে বুঝে কেউ অশান্তি করেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়।”

২০৪টি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী, ৬৬টি বুথে রাজ্য পুলিশ যেভাবে কাজ করেছে তাতে নির্বাচন কমিশনেরও কৃতিত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এই উপ-নির্বাচনের ফল শহরে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ফিরিয়ে আনবে বলে দাবি প্রশাসনের। খড়্গপুরের নির্বাচনী আধিকারিক তথা মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “এই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পিছনে প্রশাসনিক টিম-ওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সেই সঙ্গে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ভোটারেরা সংযত আচরণে এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হয়েছে।” আর খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “এর কৃতিত্ব জনসাধারণের। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিল। কোনও জোরাল অভিযোগ আমরা পাইনি। আসলে সকলের সহযোগিতায় আমাদের পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে এই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হল।”

লড়াই ছিল ত্রিমুখী। তবে ভোটের প্রচারে দেখা গিয়েছিল দ্বিমুখী বাকযুদ্ধ। এসেছিল মাফিয়া যোগের প্রসঙ্গও। ভোট শেষে দেখা গেল, সে যুদ্ধ ছিল ঠান্ডাযুদ্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Assembly By Election TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE