পাতকুয়োর প্রবেশ পথের পাঁচিলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প--ঝাড়গ্রাম স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের জন্য একটি পাতকুয়োর জল ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ওই সরকারি পাতকুয়োর জল ব্যবহার করতেন অরণ্যশহরের দশ নম্বর ওয়ার্ডের ১২৫ টি পরিবার। সোমবার ওই কুয়ো চত্বরে ঢোকার দরজাটি ইঁট-সিমেন্টের গাঁথনি দিয়ে চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে পূর্ত দফতর। ব্যবহার্য জলের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দণ্ডকারণ্য পল্লি, বিবেকানন্দ পল্লি ও কনকপল্লির বাসিন্দারা। এলাকার সিংহভাগ বাসিন্দা শ্রমজীবী অথবা ছোটখাটো ব্যবসা করে দিনগুজরান করেন। জলের অভাবে তাঁদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
নব নির্মিত ঝাড়গ্রাম স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের পিছন দিকে রয়েছে তিনটি পাড়া। মাস ছ’য়েক আগে স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের চার পাশে পাঁচিল দেওয়ার ফলে বাসিন্দাদের চলাচলের সহজপথটিও অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই এখন বেশ কিছুটা ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। ওই এলাকায় পুরসভার টাইম কল রয়েছে। সেই জল পান করেন বাসিন্দারা। তবে টানা লোডশেডিং হলে কলে জল মেলে না। স্নান, বাসন মাজা, কাপড় কাচার মতো নিত্য ব্যবহার্য কাজের জন্য এতদিন সরকারি পাতকুয়োটির জল ব্যবহার করতেন এলাকাবাসী। কিন্তু মাস ছ’য়েক আগে স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের পাঁচিল দেওয়া হলে পাতকুয়োটি কমপ্লেক্সের ভিতরে চলে যায়। বাসিন্দাদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে পূর্ত দফতর পাঁচিলে একটি ছোট লোহার দরজা করে দেয়। তারপর থেকে ওই দরজাটি ব্যবহার করে বাসিন্দারা কুয়োর জল সংগ্রহ করতেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, চলতি বছরে মুখ্যমন্ত্রী ওই স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সটির দ্বারোদ্ঘাটন করবেন। তাই নিরাপত্তার কারণে ওই দরজাটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসনিক মহল। রবিবার পূর্ত দফতরের লোকজন পাঁটিলের দরজার অংশটি বন্ধ করতে গেলে বাধা দেন এলাকার মহিলারা। কিন্তু সোমবার পূর্ত দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, উপর মহলের নির্দেশে স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের পিছন দিকের ছোট দরজাটি খুলে সেখানে ইঁটের গাঁথনি করা হচ্ছে। এ দিন পাঁচিলের দরজাটি খুলে ইট-সিমেন্ট দিয়ে প্রবেশপথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রবীণা বীণা দত্ত, পেশায় শিক্ষিকা দর্পনা দাস, গৃহবধূ উষা শীট, কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়-রা বলেন, “আমাদের জল বন্ধ করে দিয়ে এ কেমন উন্নয়ন? পুরসভার টাইম কলের জল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাওয়া যায়। সময়ে অসময়ে এই পাতকুয়োর জলই আমাদের প্রধান ভরসা। সেটাই বন্ধ করে দেওয়া হল।” এলাকাবাসীর এই সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরাও। সিপিএমের স্থানীয় শাখা সম্পাদক দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উন্নয়ন হোক, তবে বাসিন্দাদের এভাবে সমস্যায় ফেলার আগে প্রশাসনের তরফে বিকল্প কিছু ভাবা উচিত ছিল।” দশ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনশ্যাম সিংহ বলেন, “এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় টাইম কল রয়েছে। তবুও বাাসিন্দাদের সমস্যা হলে নতুন একটি পাতকুয়ো করার জন্য উদ্যোগী হব।”
পূর্ত দফতরের ঝাড়গ্রামের অবর সহ-বাস্তুকার স্বপ্না ঘোষ বলেন, “সরকারি পাতকুয়োটি স্পোর্টস্ কমপ্লেক্সের ভিতরে থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রবেশ পথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy