—প্রতীকী চিত্র।
সাপ ও সাপের বিষ পাচারের কয়েক কোটি টাকার কারবারের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
সপ্তাহ খানেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকের গাজীপুর ও দামোদরপুর গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে পূর্ব মেদিনীপুর বনবিভাগের বাজকুল রেঞ্জের অফিসারেরা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ মঞ্চ যুগ্ম ভাবে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সর্পকূলের হদিশ পান।
ঘরের মধ্যে মাটির কলসি, ট্রাঙ্ক ও ঝুপির মধ্যে রাখা অসংখ্য বিষধর সাপ! কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া—সব মিলিয়ে গোটা পঁচিশ তো হবেই। ঘরবন্দি সাপেদের ল্যাটা মাছ, ব্যাঙ খেতে দেওয়া হত। আগে ওই ঘরে আরও সাপ ছিল। এপ্রিল প্রচণ্ড গরমে মারা গিয়েছে ২১টি বিষাক্ত ফণাধারী খরিস। সাপ উদ্ধারের সঙ্গেই সামনে উঠে এসেছে কয়েক কোটি টাকার সাপ ও সাপের বিষ পাচারের বেআইনি কারবারের কথা। একাধিক রাজ্যে এই চক্রের জাল ছড়ানো এবং বহু দিন ধরে এই পাচারের কাজ চলছে বলে অভিযোগ।
চণ্ডীপুর ব্লকের গাজীপুর ও দামোদরপুরে অভিযান চালিয়ে প্রচুর বিষধর সাপ উদ্ধারের পাশাপাশি সাপের বিষ পাচারে জড়িত সন্দেহে একজন সাপুড়ে ও তার সঙ্গীকে গ্রেফতার করে তমলুক আদালতে তোলা হয়েছে। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা হল জ্যোৎস্না রানি সিং (৬৫) ও সুকুমার বর(৫৫)। তারা আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে।
জ্যোৎস্না রানি সিং ও সুকুমার বরের জামিন খারিজ করেছেন তমলুক আদালতের বিচারক। পূষন জানান, ধৃত দুই ব্যক্তিকে আবার আদালতে তোলা হবে আগামী ১২ই জুলাই। বনদফতরের এক আধিকারিক জানান, যাদের ধরা হয়েছে তারা চুনো পুঁটি। এরাই সাপ্লাই লাইন। এদের ‘লিঙ্ক ম্যান’ কারা সেটাই আমাদের জানতে হবে।
জীববৈচিত্র দলের সদস্য দেবগোপাল মণ্ডল জানান, ধৃতেরা বহু বছর ধরে বিষাক্ত সাপ ধরার কাজ করে। সাপের গতিবিধি তাদের নখদর্পণে। অনায়াসে হাত দিয়ে তারা বিষধর সাপ ঘরতে পারে। জ্যোৎস্না রানি জেরায় জানিয়েছে, ৫০ বছর ধরে সে এই কাজে যুক্ত। সে কলসির ভিতরে হাত দিয়ে যে ভাবে বিষধর সাপ বের করছিলেন, তা দেখে বিস্মিত বন দফতরের কর্মীরাও।
বাজকুল রেঞ্জের রেঞ্জার পূষন দত্ত বলেন, ‘‘ওই দুই ব্যক্তি শুধু নয়, এই কাজে যুক্ত রয়েছেন আরও অনেকে। যে সাপ উদ্ধার হয়েছে তার চেয়ে বহু বেশি সাপ নিয়েই এদের কারবার। কারা সাপের বিষ কেনেন, কোথায় পাচার হয়, সেটাই দেখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ভিন জেলা ও ভিন জেলা থেকেও সাপের বিষ ও বিষাক্ত সাপ কিনে নিয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে। চন্ডীপুর এলাকায় অনেকে এতে যুক্ত। মাথার খোঁজ চলছে।
তদন্তকারীরা জেরা করে জানতে পেরেছেন, ধৃতরা সাপ ধরার পর তাদের দাঁতে বেশি চাপ দিয়ে অতিরিক্ত বিষ বার করত। সাপ-ভেদে মোটামুটি ১০–১০০ মিলিলিটার বিষ এক-একটি সাপ থেকে বের করা হয়। অনেক সময় বেশি চাপ দিতে গিয়ে দাঁত ভেঙেও যায়। তদন্তকারীদের দাবি, সাপুরেদের সাপ খেলা দেখানো ও সাপ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অপরাধযোগ্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামগুলিতে তা চলছে। সেই সঙ্গে আড়ালে চলছে বিষ পাচার। বিষ ‘ভেনম পাওডার করেই চালান দেওয়া হত।
একবার সাপের বিষ বের করে নিলে আবার দাঁতে বিষ তৈরি হতে সময় লাগে এক মাসের মতো। মহিষাদল রাজ কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রধান শুভময় দাস জানান, সাপের বিষ দাঁত অনেক সময় বিষ বের করার সময় ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার সাত দিন পর থেকেই নতুন দাঁত তৈরি হওয়া শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy