কলাইকুণ্ডায় সামরিক বিমানঘাঁটির বর্তমান ছবি। ফাইল চিত্র।
খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডায় সামরিক বিমানঘাঁটি রয়েছে। এ বার সেখানে হবে বিমানবন্দরও। পরিকল্পনা এমনই।
জানা যাচ্ছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ‘অসামরিক বিমান চলাচল সেল’ থেকে একটি চিঠি এসেছে। এই সেল রাজ্যের পরিবহণ দফতরের অধীনে রয়েছে। কলাইকুণ্ডায় বিমানবন্দরের পরিকাঠামো তৈরির জন্য ঠিক কত জমি প্রয়োজন, ইতিমধ্যে তা দেখা হয়েছে। সমীক্ষা হয়েছে। ওই চিঠি আসার পরে সংশ্লিষ্ট জমির মাপজোক করা হয়েছে। জেলার ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি ওই এলাকা পরিদর্শনে যান প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
জেলায় আসা সেলের ওই চিঠির ব্যাপারে অবশ্য কিছু বলতে চাননি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল। কিছু বলতে চাননি অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তুষার সিংলাও। ‘প্রশাসনিক বিষয়’ বলে উত্তর এড়িয়েছেন তাঁরা। তবে জেলা প্রশাসনের অন্য এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘এলাকা পরিদর্শন হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।’’ জানা যাচ্ছে, এই প্রথম নয়, এর আগেও প্রস্তাবিত বিমানবন্দর প্রকল্প নিয়ে কলাইকুণ্ডায় পরিদর্শন হয়েছে। পরিদর্শনে এসেছে ‘মাল্টি- ডিসিপ্লিনারি টিম’। এই দলে যেমন ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র (এএআই) প্রতিনিধি ছিলেন, তেমন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিও ছিলেন। এএআই-এর সঙ্গে রাজ্যের ভিডিয়ো বৈঠকও হয়েছে। খড়্গপুর অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আইআইটি রয়েছে। বড় স্টেশন রয়েছে। শিল্পতালুক রয়েছে। বিমানবন্দর চালু হলে খড়্গপুরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলে নিশ্চিত বিভিন্ন মহল। আশায় বণিক মহলও। ‘পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক চেম্বার অফ কমার্স অ্যা ইন্ডাস্ট্রি’র সাধারণ সম্পাদক চন্দন বসু বলছেন, ‘‘প্রস্তাবিত ওই বিমানবন্দর প্রকল্পের বিষয়টি শুনেছি। পরিকল্পনা কার্যকর হলে নিশ্চিতভাবেই খড়্গপুরের গুরুত্ব আরও অনেকখানি বেড়ে যাবে।’’
জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রের ‘রিজিওনাল কানেক্টটিভিটি স্কিম’ (আরসিএস)-এ জুড়েছে খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডা। ছোট শহরগুলির মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়াতে এই প্রকল্প। সব দিক খতিয়ে দেখা গিয়েছে, আরসিএস-অপারেশন শুরু করতে কলাইকুণ্ডায় বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মোট ৩৮.২৫ একর জমি। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করাচ্ছে, বিমানবন্দর চালু করতে হলে আগে টার্মিনাল গড়তে হবে। কলাইকুণ্ডার বিমানঘাঁটি মূলত সামরিক। এখানে মাঝেমধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া হয়। ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটদের অ্যাডভান্স ট্রেনিংও হয় এখানে। অবসরপ্রাপ্ত এক সামরিক কর্তা মনে করাচ্ছেন, বায়ুসেনার পাইলটরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সামরিক কৌশল কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটিতেই শেখেন। কলাইকুণ্ডার প্রশিক্ষণে উতরে যাওয়ার পরেই একজন পাইলট ফাইটার স্কোয়াড্রনে জায়গা পান। বড় রানওয়ে রয়েছে এখানে। দূরত্ব প্রায় ২.৭ কিলোমিটার। অনুমান, এই রানওয়ের একাংশ অসামরিক বিমান চলাচলে ব্যবহার হতে পারে।
কলকাতার পাশাপাশি এখন রাজ্যের বাগডোগরা, অণ্ডালে বিমানবন্দর রয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আরও কয়েকটি এলাকায় বিমানবন্দর চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিমান পরিবহণ পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতে, ছোট শহরগুলির মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়াতে। এর মধ্যে কলাইকুণ্ডা অন্যতম। এ নিয়ে ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন মহলের মতে, পরিকল্পনা কার্যকর হলে ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদাও মিটবে। কলাইকুণ্ডা থেকে ভুবনেশ্বরগামী ও বিশাখাপত্তনমগামী বিমান চলতে পারে। বিভিন্ন মহলের অনুমান, কলাইকুণ্ডা থেকে আর কোন কোন রুটে যাত্রী বিমান চলাচল করতে পারে তা বিমান সংস্থাগুলির ইচ্ছাপ্রকাশের উপরেই অনেকটা নির্ভর করবে।
কলাইকুণ্ডার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিমানঘাঁটি লাগোয়া ৩৮.২৫ একর জমি প্রয়োজন। প্রথম দফায় ২১.৪৫ একর। দ্বিতীয় দফায় ১৬.৮০ একর। কে জমি অধিগ্রহণ করবে, রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দেবে, না কি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণ করবেন, এখনও স্পষ্ট নয়। বিমানবন্দরের পরিকাঠামো গড়ে উঠলেই যাত্রী বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার কথা কলাইকুণ্ডায়। সামরিক বিমানঘাঁটি থেকেও এ বার অসামরিক বিমান পরিষেবা শুরু হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy