Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Howrah-Mumbai CSMT Train Accident

অন্য ডিভিশনে দুর্ঘটনা, ভোগান্তি খড়্গপুরেও

দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজে খড়্গপুর থেকে যায় একটি ১৪০ টনের রেলক্রেন। এছাড়াও খড়্গপুর হয়ে গিয়েছে জিএম স্পেশাল ট্রেন ও একটি অফিসার স্পেশাল ট্রেন।

রেললাইনে নজরদারি। খড়্গপুর স্টেশনে, মঙ্গলবার।

রেললাইনে নজরদারি। খড়্গপুর স্টেশনে, মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৮:২০
Share: Save:

আতঙ্ক, অপেক্ষা, দুর্ভোগ, ক্ষোভ।

চক্রধরপুর ডিভিশনে হাওড়া-মুম্বই মেলে দুর্ঘটনার পরে মঙ্গলবার সারাদিন এমনই পরিস্থিতি থাকল খড়্গপুর স্টেশনে। বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হল। কিছু ট্রেন চলল দেরিতে। সোমবার রাতে এই খড়্গপুর স্টেশন থেকেই ওই মুম্বই মেলে উঠেছিলেন প্রায় ১৩০ জন যাত্রী। যদিও এ দিন ১৪ জন জখমের যে তালিকা খড়্গপুর রেল ডিভিশনের হাতে এসেছে তাঁদের মধ্যে খড়্গপুর স্টেশন থেকে রওনা দেওয়া যাত্রীদের নাম নেই। এ দিন সকাল থেকে খড়্গপুর স্টেশনের সাবওয়ের কাছে হেল্প ডেস্ক করেছিল রেল। তবে ওই হেল্প ডেস্কে সাধারণ তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া মুম্বই মেলের কোনও যাত্রীর পরিজন আসেননি।

দুর্ঘটনার উদ্ধার কাজে খড়্গপুর থেকে যায় একটি ১৪০ টনের রেলক্রেন। এছাড়াও খড়্গপুর হয়ে গিয়েছে জিএম স্পেশাল ট্রেন ও একটি অফিসার স্পেশাল ট্রেন। খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার অলোক কৃষ্ণ বলেন, “হাওড়া-মুম্বই মেলের দুর্ঘটনার পরে যাঁরা সুস্থ ছিলেন, সেই যাত্রীদের নিয়ে বিশেষ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল থেকে মুম্বই রওনা দিয়েছে। আমরা উদ্ধারকাজে এখান থেকে রেলক্রেন পাঠিয়েছি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের পরিজনদের সুবিধায় হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। লাইনে বহু ট্রেন ও মালগাড়ি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কয়েকটি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে।”

এ দিন দুর্ঘটনার পরে বাতিল করা হয় হাওড়া-তিতলাগঢ় ইস্পাত এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম-ধানবাদ এক্সপ্রেস, হাওড়া-বরবিল জনশতাব্দী, শালিমার-লোকমান্যতিলক এক্সপ্রেস, হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের মতো বেশ কয়েকটি ট্রেন। হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত, হাওড়া-পুণে আজাদ হিন্দ, হাওড়া-আমেদাবাদ এক্সপ্রেস, হাওড়া-মুম্বই মেল, হাওড়া-মুম্বই গীতাঞ্জলির মতো বহু ট্রেনকে খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর, পুরুলিয়া হয়ে অথবা খড়্গপুর-টাটানগর থেকে সিনি হয়ে ঘুরপথে চালানোর পরিকল্পনা হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। খড়্গপুরে এসে ঘাটশিলা, ঝাড়গ্রাম, রাখামাইনস, টাটানগর যাওয়ার ট্রেন না পেয়ে বিপাকে পড়েন অনেকে।

বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, দুই শিশু-সহ পরিবার নিয়ে খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের করবী পাল। তিনি বলেন, “আমাদের এক আত্মীয়ের বিয়ের আমন্ত্রণে ঝাড়গ্রামের শিলদায় যাচ্ছি। ইস্পাত এক্সপ্রেসে টিকিট ছিল। হাওড়ায় এসে জানতে পারলাম ট্রেন বাতিল। কোনও ভাবে খড়্গপুরে এলাম। ট্রেন ছাড়া উপায় নেই। অথচ ট্রেনে উঠতে এখন রীতিমতো প্রাণ সংশয় লাগছে।” রাখামাইনসের ক্ষীরোদচন্দ্র ভকত মেয়েকে কলকাতার একটি কলেজে ভর্তি করতে পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন। ইস্পাত বাতিল হওয়ায় মেদিনীপুর লোকাল ধরে খড়্গপুর আসেন। তিনি বলেন, ‘‘রাখামাইনস যাওয়ার ট্রেন সব বাতিল। খুব বিপদে পড়লাম। আতঙ্ক ছাড়া আর কিছু নেই রেলে।”

বিপত্তি দেখা গিয়েছে খড়্গপুর-চেন্নাই-হায়দরাবাদ রুটেও। এ দিন টাটানগর থেকে খড়্গপুরে এসে হায়দরাবাদ যাওয়ার ফলকনুমা এক্সপ্রেসের অপেক্ষা করছিলেন কলেজ পড়ুয়া অর্চনা কুমারী। তিনি বলেন, “হায়দরাবাদে কলেজে যাব। টাটানগর থেকে সেই সকালে ট্রেন ধরে খড়্গপুর এসেছি। এখন শুনছি ওই রুটেই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার প্রভাবে ফলকনুমাও তিন ঘণ্টার বেশি দেরিতে চলছে। এই দেরি আরও বাড়বে। ট্রেন তো এখন সময়ে চলেই না। তার উপরে দুর্ঘটনা। খুব আতঙ্কিত!” ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেসের অপেক্ষায় খড়্গপুর স্টেশনে বসে থাকা চন্দ্রকোনা রোডের সুবোধ সামন্ত বলেন, “চোখ দেখাতে হায়দরাবাদ যাব। সকালে বাড়ি থেকে আসার পরে এখন শুনছি ইস্টকোস্ট আপাতত দু’ঘণ্টা দেরি। ট্রেন যাত্রা এতটাই আতঙ্কের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে পরিবারের কাছে বিমা, ব্যাঙ্কের সমস্ত কাগজপত্র দিয়ে এসেছি।”

খড়্গপুর রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার অলোক কৃষ্ণের অবশ্য আশ্বাস, “আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। হাজার-হাজার ট্রেনের মধ্যে একটা দুর্ঘটনা হচ্ছে। সেটাও কাম্য নয়। যে কোনও দুর্ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE