উৎসবের মরসুমে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। মেদিনীপুর শহরে। নিজস্ব চিত্র।
পেটরোগা বাঙালি পুজোর দিনগুলিতে বোধহয় দামোদর শেঠ হয়ে ওঠে!
মেদিনীপুরের এক মাঝারি মাপের রেস্তরাঁর মালিক পুজোর সময় ব্যবসার কথা প্রসঙ্গে নিজেই পাড়লেন সুকুমার রায়ের দামোদর শেঠের প্রসঙ্গ। ঝোঝালেন, চাইনিজ থেকে কন্টিনেন্টাল, পুজোর ক’টা দিনে বিক্রিবাটা মন্দ হয়নি। সঙ্গে রইল আক্ষেপও। বললেন, ‘‘বৃষ্টিটা যদি না হত...!’’
প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা, ঠাকুর দেখা, তার ফাঁকে ভূরিভোজ। বৃষ্টিকে হারিয়ে দুই জেলাতেই দুর্গা আর পেট— দুই পুজোর মৌতাতে মেতেছিল বাঙালি। মেদিনীপুর শহরের এক অভিজাত রেস্তরাঁর মালিক অরুণাভ ঘোষ বলছিলেন, ‘‘পুজোয় ব্যবসা ভালই হয়েছে। সাবেকি বাঙালি খাবার ছিল। কন্টিনেন্টাল মেনুও ছিল। আমরা বিশেষ থালিও রেখেছিলাম।’’ বিরিয়ানি? অরুণাভ বলছেন, ‘‘পুজোর সময়ে বিরিয়ানি থাকবে না, তা কী হয়!’’ অনেক রেস্তরাঁয় পুজোর দিনগুলিতে গড়ে বিক্রি হয়েছে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। ফুটপাথের অনেক দোকানেও ছিল লম্বা লাইন।
ঝাড়গ্রাম শহরের মধুবন মোড়ের একটি মাল্টি কুইজিন রেস্তরাঁর মালিক তাপস বেরা বলেন, ‘‘চার বছর হল এই রেস্তোরাঁ খুলেছি। করোনার বছরগুলিতে ব্যবসায় খুবই মন্দা ছিল। এ বার পুজোয় আশাতীত ব্যবসা হয়েছে। লাভও হয়েছে। অষ্টমীতে রাত দেড়টা আর নবমীতে রাত দু’টো অবধি রেস্তোরাঁ খোলা রাখতে হয়েছিল। লাভের টাকায় রেস্তোরাঁ নতুন করে সাজিয়েছি।’’ পুজোর দিনগুলিতে নাগাড়ে কাজ করে কর্মীরা এতটাই কাহিল হয়ে গিয়েছিল যে, পুজোর পরে চারদিন বন্ধ ছিল রেস্তরাঁ। গোপীবল্লভপুরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক বিভাস সিংহ বলেন, ‘‘একদিন রাত দশটায় খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল।’’ ঝাড়গ্রামের একটি অনলাইন হোম ডেলিভারি খাবার সরবরাহকারী সংস্থার মালিক আকাশ সমাজদার বলেন, ‘‘শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকাতেও এ বার প্রচুর অর্ডার পেয়েছি।’’
রেলশহর খড়্গপুরের রেস্তরাঁগুলিতেও দেখা গিয়েছে ভিড়। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি আড্ডাও জমেছে খোলামেলা ছাদের উপরে থাকা রেস্তরাঁয়। ইন্দার এমনই এক রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, ‘‘ভিড় ঠেলে পুজো দেখার ফাঁকে খোলামেলা পরিবেশে কিছুক্ষণ কাটাতে চেয়েছে মানুষ। সঙ্গে মুখরোচক খাবার। সেই মতো আমরা ব্যবস্থা রেখেছিলাম। সেটা মানুষ গ্রহণ করায় ব্যবসা ভালই হয়েছে।’’ বৃষ্টি হলেও পুজোর দিনগুলিতে শহরের অধিকাংশ রেস্তরাঁয় ভিড় জমেছিল। শহরের ঝাপেটাপুরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁর মালিক নিতিন শর্মা বলেন, ‘‘এ বার পুজোয় ব্যবসা ভাল হয়েছে আমাদের। আমরা আগের মতোই স্বাদ ও গুণমান বজায় রাখায় সাফল্য পেয়েছি।’’ ঘাটালের এক বিরিয়ানি দোকানের কর্মী শেখ সামসুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘পুজোতে এ বার পঞ্চমী থেকেই বিরিয়ানি দোকানে প্রচুর খদ্দের ছিল। রাত একটা পর্যন্ত খদ্দের ছিল।’’ ঘাটালের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বলছিলেন, ‘‘পুজোর জন্য রেস্টুরেন্টে স্পেশাল আইটেম ছিল। রকমারি খাবারের খদ্দেরও ছিল। ভিড় থাকায় প্রচুর খদ্দের ঘুরেও গিয়েছিল।’’
পুজোয় খদ্দেরের এতটাই ভিড় ছিল যে, গড়বেতার একটি নামী রেস্টুরেন্ট ৮ জন অতিরিক্ত কর্মচারী রেখেছিল। রেস্টুরেন্টের মালিক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘গত দু’বছরের ক্ষতি ঢেকে এ বার ভালই লাভ হয়েছে।’’ চন্দ্রকোনা রোডের একটি ফাস্টফুডের দোকান মালিক বাবলু অধিকারী বলেন, ‘‘ফুটপাথের অস্থায়ী দোকান হলেও খদ্দেরের চাপ এ বার বেশি ছিল। বৃষ্টির মধ্যেও ভিড় হয়। রোজগার ভালই হয়েছে।’’ গড়বেতার একটি হোটেলের কর্তা শুভ্রকান্তি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্যাস সহ অনান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। আমাদের হোটেল, রেস্টুরেন্ট চালানো দায় হয়ে যাচ্ছে। তবুও গত দু’বছরের তুলনায় এ বার খদ্দেরের সংখ্যা বেশ বেশি ছিল।’’
দুগ্গার হাত ধরেই লক্ষ্মী ফিরল রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীদের ঘরে।
(তথ্য সহায়তায়: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী, কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy