ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সিংহদুয়ার বন্ধ। বাইরে নোটিস বোর্ড। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার টালিগঞ্জের বাসিন্দা সঞ্জীব সরকার সপরিবার বেড়াতে এসেছিলেন ঝাড়গ্রামে। রাজবাড়ির কাছে থাকবেন বলেই বুকিং করেছিলেন টুরিস্ট কমপ্লেক্সে। কিন্তু অরণ্য-শহরের অন্যতম আকর্ষণ ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে ঢুকতে পারেননি। মূল ফটক বন্ধ। সামনে বোর্ডে লেখা— ‘ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সর্বজনীন দর্শনীয় স্থান নয়।’। অথচ, পর্যটন দফতর-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ‘দর্শনীয় স্থান’ হিসেবেই উল্লেখ রয়েছে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির।
সম্প্রতি রাজপরিবারের তরফে সিংহদুয়ার বন্ধ করে ওই নোটিস বোর্ড ঝোলানো হয়েছে। ফটকের সামনে জমায়েত করতেও বারণ করা হয়েছে। শুধু যাঁরা রাজবাড়িতে থাকার জন্য ‘বুকিং’ করবেন, তাঁরাই ভিতরে ঢুকতে পারবেন। ফলে, সঞ্জীবের মতো অনেক পর্যটক হতাশ হয়ে ফিরছেন।
১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতানার সর্বেশ্বর সিংহ চৌহান ঝাড়গ্রামের জংলি মাল রাজাকে হারিয়ে এখানে মল্লদেব রাজবংশের সূচনা করেন। শেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেবের আমলে ১৯৩০ সালে ৭০ বিঘা জমিতে তৈরি হয় তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট এই রাজবাড়ি। রাজবাড়ির স্থাপত্যে ইউরোপীয় ও মুঘল শৈলীর ছাপ রয়েছে। লর্ড ওয়েলিংটন, প্রফুল্ল ঘোষ, বিধানচন্দ্র রায় থেকে উত্তমকুমার—বহু খ্যাতনামা মানুষজন এই রাজবাড়িতে এসেছেন। এখানে একাধিক সিনেমার শুটিংও হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ‘ইন্ডিয়ান হেরিটেজ হোটেলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য। রাজবাড়ির নিজস্ব অতিথিশালা ‘দ্য প্যালেস ঝাড়গ্রাম হেরিটেজ’-এর ১৪টি ঘরে মোট ৪০ জন পর্যটক থাকতে পারেন। বহু বিদেশি পর্যটকও রাজবাড়িতে এসেছেন। তবে কয়েক বছর আগে, মদ্য পান করে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় কয়েক জন যুবক দোতলায় উঠে গন্ডগোল করার পরে, দ্বিতীয় গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে পর্যটকেরা সিংহদুয়ার পেরিয়ে রাজবাড়ি চত্বরে একটা অংশ পর্যন্ত ঢুকতে পারতেন। ২০২৩ সালে পুজোর সময় ড্রোন উড়িয়ে কয়েক জন যুবক রাজ পরিবারের ব্যক্তিগত পরিসরের ছবি তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তা ছাড়া, মানুষজন ভিতরে ঢুকে রাজবাড়ি চত্বর নোংরা করছেন, রাজ পরিবারের ব্যক্তিগত এলাকায় ঢুকে পড়ছেন বলে রাজ পরিবারের দাবি।
সমস্যা সমাধানে বছর খানেক আগেও রাজবাড়ি মূল ফটক বন্ধ করা হয়েছিল। পরে, আবার খোলা হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা বাড়ায় সম্প্রতি ফের সিংহদুয়ার বন্ধ করা হয়েছে। মূল ফটকে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন। তবে রাজ পরিবারের দাবি, তা-ও অনেকে ভিতরে ঢুকতে চান। তাই বোর্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজ পরিবারের সদস্য বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, ‘‘অনেকে গেটে এসে বার বার ঝামেলা করছেন। আমাদের গোপনীয়তা কিছু থাকছে না। বিদেশি পর্যটকেরা এলে অস্বস্তি বোধ করেন। অনেকে জানেন না, এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি।’’ বিক্রমাদিত্যর ক্ষোভ, রাজবাড়ি চত্বর পরিষ্কার করা বা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সহযোগিতা মেলেনি। এ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘রাজবাড়ি ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাই ওঁরা ভিতরে না-ও ঢুকতে দিতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy