ভেঙে গিয়েছে হেরিটেজ ভবন।
বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের পুরনো মাটির ভবনটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী পূর্তির অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা সেই ‘হেরিটেজ ভবন’-এর একাংশই ভেঙে পড়ল সংস্কারের কাজ চলাকালীন।
সোমবার বিকেলে হঠাৎই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ওই ভবনের একাংশ। প্রশাসনিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। বছরখানেক আগে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের নজরদারিতে কাজ শুরু হয়েছিল। কাজের দায়িত্বে ছিল পূর্ত বিভাগ (সামাজিক ক্ষেত্র)। ফলে, এই সংস্কার কাজে পূর্ত দফতর ও হেরিটেজ কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে এই বীরসিংহেরই একটি তোরণ তৈরি নিয়ে পূর্ত দফতরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরিই বলেছিলেন, ‘‘এত খাঁই কেন?’’
ছাত্রাবাসের হেরিটেজ ভবন ভেঙে পড়া প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই পদক্ষেপ করা হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কী ভাবে, কেন ভেঙে পড়ল ওই মাটির ছাত্রাবাস, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কোনও গাফিলতি ছিল কিনা, তাও দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এসেছিলেন হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধি-সহ পূর্ত দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। ছিলেন ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসও।
১৮৫৩ সালে বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় গড়েছিলেন বিদ্যাসাগর নিজেই। ১৮৬৯ সালে স্কুলের পাশে ভাই শম্ভুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি মাটির বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। দোতলা ৮ কামরার মাটির ওই বাড়ির দুটি ঘরে থাকতেন শম্ভুচন্দ্র। বাকি ঘরগুলিতে ছাত্ররা থাকত। পাশেই আরও একটি মাটির বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে স্কুলের অফিস ও প্রধান শিক্ষকের ঘর ছিল। পরবর্তী কালে ওই দুটি বাড়িই ছাত্রাবাস হিসাবে ব্যবহত হত। দুটি বাড়িই শতাধিক বছরের পুরনো।
২০১৯ সালে বিদ্যাসাগরের জন্মের দু’শো বছর পূর্তি উৎসবে এসে বীরসিংহ গ্রামকে ঢেলে সাজার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।এক গুচ্ছ প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন। তখনই মাটির ওই ছাত্রাবাস দু’টিকে হেরিটেজ ভবন ঘোষণা করেন তিনি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই হেরিটেজ কমিশন ছাত্রাবাসটি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের ডিপিআর তৈরির কাজ শুরু করে। প্রাথমিক ভাবে ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। পূর্ত দফতর কাজের দায়িত্ব পায়। বছর খানেক কলকাতার এক ঠিকাদার সংস্থা কাজ শুরু করে।
জানা গিয়েছে, পুরনো ছাত্রাবাসটি রেখেই সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। দেওয়ালের পুরনো মাটি ছাড়িয়ে নতুন ভাবে খড়-মাটি মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হচ্ছিল। পুরনো কাঠের কাঠামো সরিয়ে নতুন করে কাঠের কাঠামো তৈরি হচ্ছিল। পুরনো টিনের বদলে নতুন টিন দিয়ে ছাউনির কাজও হয়ে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে কাঠের দেওয়ালের কাজ চলছিল। সোমবার বিকেলের দিকে ছাত্রাবাসের একাংশ ভেঙে পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার গাফিলতিতেই এমনটা হয়েছে। একে কাজ চলছিল ঢিমেতালে। তার উপর পূর্ত দফতর বা হেরিটেজ কমিশনের নিয়মিত নজরদারি ছিল না। শ্রমিকরা নিজেদের মতো করে কাজ করতেন। পুরনো মাটির ঘরের চারপাশে বৃষ্টির জলও জমে ছিল। জল যাতে না জমে থাকে, সে জন্যও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। সব মিলিয়েই এমনটা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy