বিশ্বকর্মার মূর্তি গড়তে ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র।
একদা জাঁক ছিল শিল্পশহরের পুজোয়। বাইরে থেকে দর্শনার্থীর ঢল নামত। কিন্তু বিশ্বকর্মার খাসতালুকেই জাঁক কমেছে কারিগরি বিদ্যার দেবতার পুজোয়।
বিশ্বকর্মা পুজোয় উৎসব হারিয়েছে। মূর্তির আকার কমেছে। বলছেন প্রবীণ বাসিন্দা এবং শিল্পীরা। হলদিয়ার একটি শিল্প সংস্থার দীর্ঘদিনের কর্মী ছিলেন দেবপ্রসাদ মহাপাত্র। দেবপ্রসাদ বলেন, ‘‘সত্তরের দশক থেকে দেখেছি হলদিয়ার পাতিখালি থেকে হিন্দুস্থান মার্কেটে শতাধিক নির্মাণ সংস্থা কাজ করতেন। রেললাইনের ধারে শতাধিক পুজো। কুকড়াহাটিতে শোভাযাত্রা করে প্রতিমা বিসর্জন হত। এখন সে সব অতীত।’’ তাঁর কথায় সিকিভাগ জৌলুস নেই আর। আগে পাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা রাত থেকে আসতেন হলদিয়ায়।
হলদিয়ায় পটুয়াপাড়া বলে বিখ্যাত রামকিঙ্কর বেইজ মৃৎশিল্প কর্মশালায় এই সময় ব্যস্ততা তুঙ্গে। বিশ্বকর্মার পরেই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ। বর্ষীয়ান শিল্পী নন্দলাল জানা জানান, হলদিয়ার শিল্পের হাঁড়ির হাল জানতে পটুয়াপাড়া ঘুরলেই বোঝা যাবে। নন্দলাল বলেন, ‘‘বিভিন্ন শিল্পসংস্থা নামমাত্র পুজো করছেন। তাঁরা এসে বলছেন প্রতিমা ছোট করুন। মাঝারি সাইজের প্রতিমা খুঁজছেন।’’ নন্দলালের আক্ষেপ, করোনার আগে বড় প্রতিমা করতেন ১০-১২টি। আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকার ব্যবসা হত। এখন বড় প্রতিমা খুবই কম। সব মাঝারি ও ছোট সাইজের প্রতিমা। গড় দাম ধরলে দেড় থেকে দুই হাজার।
এই পটুয়া পাড়ায় শতাধিক জন কাজ করেন। কেউ বাঁশ কাটছেন। কেউ রং করছেন। কেউ সাজ লাগাচ্ছেন। শিল্পী জ্যোৎস্না দাসের পরিবার দীর্ঘ ২৫ বছর ধরেই প্রতিমা নির্মাণের কাজ করেন। জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘চার পিস বাঁশ আনতে হয় ৭০০ টাকা দিয়ে। রঙের দাম, খড়ের কাহন, মাটির দাম আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু আশ্চর্য, প্রতিমা নিতে এসে একী দর রাখছেন কর্মকর্তারা! বেশি দরদাম করলে অবিক্রিত থেকে যায় প্রতিমা।’’ নষ্ট হয়ে যায় সেই প্রতিমার সাজ। ক্ষতি হয় ব্যবসার। ঝন্টু মান্না এ বার ৩৫টি প্রতিমা করেছেন। আশা করছেন বেশিরভাগ বিক্রি হয়ে যাবে।
জৌলুস যে শিল্পশহর থেকে একেবারে হারিয়েছে তা বলা যাবে না। তবে সে জৌলুস বড় সংস্থাগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের বিশ্বকর্মা পুজোর বাজেট ১৮ লক্ষ টাকা। জানালেন পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পূর্ণচন্দ্র খিলা। পূর্ণ বলেন, ‘‘প্রতিমা হচ্ছে কাচ দিয়ে। বিগ বাজেটের পুজোয় জাঁক থাকবে।’’
শিল্পতালুকে আইভিএল ধানসিঁড়ির বাজেটও ১০–১২ লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির তরফে অসীম মান্না জানালেন এ কথা। পুজো কমিটির পক্ষে প্রদীপ মণ্ডল ও নিখিল ভুঁইয়া বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠের আদলে থিম করা হয়েছে। উদ্বোধনের দিনে ডেঙ্গি রোধে বিলি করা হবে মশারি।’’ হলদিয়ার এক্সাইড ব্যাটারি কারখানার পুজো দেখতে ভিড় হয়। পুজো কমিটির পক্ষে বিভাস দাস বলেন, ‘‘রাজবাড়ির আদলে হচ্ছে মণ্ডপ। জৌলুস কমছে না।’’ বড় পুজোয় জাঁক বজায় রয়েছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে? একটা ছবি ফুটে উঠল ডেকরেটার্স ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির কথায়। তিনি জানালেন, হলদিয়ায় হাতে গোনা কয়েকটি বড় শিল্প সংস্থায় পুজো হয় জাঁক করে। বাকি সব হয় হারিয়ে গিয়েছে। না হয় নিজের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।
হলদিয়া রিফাইনারিতে দু’টি পুজো হয়। জাঁকের নিরিখেও দর্শক টানে। তা হলে বিশ্বকর্মা ছোট হচ্ছে কেন? এক পুজো কমিটির বক্তব্য, বড় প্রতিমা নিরঞ্জনে সমস্যা হয়। তাই প্রশাসনের নির্দেশে প্রতিমার আকার ছোট হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy