Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Firecracker

পশ্চিম চিল্কায় এই প্রথম বন্ধ বাজির হাট

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর পর পশ্চিম চিল্কার বটতলায় মূল রাস্তার দু'ধারে প্রায় অর্ধেক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বাজির হাট বসত।

আদালতের পথে দুই ধৃত শান্তনু ও অতনু ভক্তা। নিজস্ব চিত্র

আদালতের পথে দুই ধৃত শান্তনু ও অতনু ভক্তা। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া ও এগরা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৬:১৫
Share: Save:

প্রকাশ্যে বাজির হাট বসত প্রতি বছর। চলত কয়েক মাস ধরে। সেখানে আসা মানুষের ভিড়ে রাস্তায় যানজটও লেগে যেত। পাঁশকুড়ার ‘বাজির হাব’ পশ্চিম চিল্কার সেই হাট অবশেষে এ বছর বন্ধ। সৌজন্য— পড়শি গ্রাম সাধুয়াপোতায় বাজি বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যু। পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে এবার হাটে দোকানই দেননি বাজি কারবারিরা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর পর পশ্চিম চিল্কার বটতলায় মূল রাস্তার দু'ধারে প্রায় অর্ধেক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বাজির হাট বসত। সেখানে ৫০টিরও বেশি দোকান বসত হাটে। বাজির হাটকে কেন্দ্র করে বসত প্রচুর খাবারের স্টলও। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলত বেচাকেনা। আর হাট চলত লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে কালীপুজো পর্যন্ত রমরমিয়ে। তবে হাট থাকত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাজি কিনতে ভিড় জমাতেন হাজার হাজার ক্রেতা। ক্রেতাদের ভিড়ের চাপে কয়েক মাস এলাকায় যানজট লেগেই থাকত এলাকা। পথচারীদের ওই বাজির হাটের অংশে রাস্তা পেরোতে ন্যূনতম আধঘণ্টা সময় লেগে যেত।

করোনা কালে দু’বছর বাজির বাজার মন্দা ছিল। এবার করোনার চোখ রাঙানি নেই। তাই এবার বাজির হাটের জন্য প্রচুর পরিমাণ বাজি তৈরি করেছিলেন বাজি কারবারিরা। কিন্তু গত মঙ্গলবার পড়শি গ্রাম সাধুয়াপোতায় বাজির কারবারি শ্রীকান্ত ভট্টের বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। তাতে এক নাবালক-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই বিস্ফোরণের পর এলাকা ছাড়া পশ্চিম চিল্কা গ্রামের বাজির চাঁইরা। গত কয়েকদিন তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ পশ্চিম চিল্কা থেকে প্রায় ছ’কুইন্ট্যাল নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার করেছে। পুলিশি অভিযানের ভয়ে অনেকে আবার বাজি এবং বাজি তৈরির সরঞ্জাম অন্যত্র সরিয়েও ফেলেছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, পশ্চিম চিল্কা গ্রামের রাধ্যেশ্যাম ঘোড়াই, গোপাল ঘোড়াই, পূর্ণচন্দ্র ঘোড়াই, তপন পাত্রেরা এলাকার বাজির মূল কারবারি বলে পরিচিত। তাঁদের অনেকেই এলাকা ছাড়া। পশ্চিম চিল্কা গ্রামের অন্তত ৪০০টি পরিবার বাজি তৈরির কাজ করে। দু’এক জনের কাছে আতস বাজি তৈরির লাইসেন্স থাকলেও অধিকাংশের কাছে কোনও লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ। আতস বাজির লাইসেন্সকে ঢাল করেই নিষিদ্ধ শব্দ বাজি বানানো হয় বলে অভিযোগ।

স্থানীয়রা মনে করছেন যেভাবে পুলিশি অভিযান চলছে, তাতে এবার বাজির হাট বসবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘হাটে বিক্রির জন্য এলাকার মহিলা ও শিশুরা দিনরাত জেগে বাজি তৈরি করত। শিশুরা মূলত বাড়ি থেকে বাজির বস্তা হাটে নিয়ে যাওয়ার কাজ করত। পুজোর ছুটিতে বাজির কাজ করে এক একজন স্কুল পড়ুয়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করে। এবারও পশ্চিম চিল্কা গ্রামে প্রচুর বাজি তৈরি হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল কালীপুজোর বাজার। কিন্তু সাধুয়াপোতা গ্রামে দুর্ঘটনার পরে সব ছবি উল্টে গিয়েছে।’’ পাঁশকুড়া থানার পুলিশও জানাচ্ছে, তারা ওই বেআইনি বাজি কারবার চালাতে দেবে না। শনিবারও পশ্চিম চিল্কা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বাজি উদ্ধার করেছে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ। ওই গ্রামে বাজি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি, কয়েকজনের নামে মামলাও করা হয়েছে।

এদিকে, সাধুয়াপোতার বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত শ্রীকান্তের দুই ছেলে শান্তনু এবং অতনু ভক্তাকে এ দিন তমলুক আদালতে তোলা হয়। বিচারক দু'জনকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখনও ঘটনার মূল অভিযুক্ত শ্রীকান্ত ভক্তা।

অন্য বিষয়গুলি:

Firecracker Panshkura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE