দুপুর ২টো ২০ মিনিটে সভাস্থল। এর মিনিট পনেরো পরে আসেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের একদা শক্তঘাঁটি ঝাড়গ্রাম যে মুখ ফেরাচ্ছে তা প্রথম বোঝা গিয়েছিল পঞ্চায়েত ভোটে। লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসন দখল করে নেয় বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতার দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রায় নিশ্চিত। এই আবহেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম নেই জেলা তৃণমূলে।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম শহরে সভা করতে এসেছিলেন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে তেমন লোক হয়নি। এরপরেই শাসকদলের অন্দরে দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপ শুরু হয়েছে। লোক না হওয়ার জন্য ছত্রধর মাহাতোকে দায়ী করে মহাসচিবের কাছে নালিশ করেছেন জেলার এক তৃণমূল নেত্রী। সব দেখে কর্মীদের একাংশ বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুভেন্দু এখনও সক্রিয় ভাবে জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেননি। এখন ছত্রধরকে মুখ করেই বিজেপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। তার মধ্যে এমন আভ্যন্তরীণ কাজিয়ায় দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। জেলার নেতা-নেত্রীদের মধ্যে বনিবনা নেই। তার ফলেই এমন পরিণতি।
জেলা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, মহাসচিব পার্থের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেন, বিরবাহার স্বামী তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি রবিন টুডুর প্রাধান্য রয়েছে জেলা সংগঠনে। তাঁরাই ছত্রধরকে মেনে নিতে পারছেন না। এমনকি মেদিনীপুরের জনসভায় ছত্রধরকে মঞ্চের সামনে ডেকে দলনেত্রী নিজে বার্তা দিলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। জেলা ও ব্লকের বেশির ভাগ পদেই রয়েছেন অজিত-বিরবাহার ঘনিষ্ঠরা। কেবল ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের সভাপতি নরেন মাহাতো হলেন ছত্রধরের অনুগামী। লোক কম হওয়ার কারণ হিসেবে জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু কিন্তু পরোক্ষে সেই নরেনের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক নেতৃত্বকে শহরে মাঠ ভরানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওদের দু’হাজার লোক নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু ওরা দেড়শো লোক এনেছিল।’’ শহরের অফিসার্স ক্লাবের ছোট মাঠ ভরানো গেল না কেন? জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিতের সাফাই, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে মহাসচিবই কম লোক আনতে বলেছিলেন। যানবাহনেরও সমস্যা ছিল।’’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা অবশ্য সরাসরিই বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার মহাসচিবের জনসভায় মেরেকেটে আটশো লোক হয়েছিল। এ তো রীতিমতো অশনি সঙ্কেত!’’
সূত্রের খবর, মাঠ ভরানোর জন্য জেলা ও ব্লকের বেশির ভাগ নেতা উদ্যোগই নেননি। পার্থের জনসভার ব্যাপারে জেলা কমিটির বৈঠকও ডাকা হয়নি। সভার আগের দিন জেলার বাকি নেতাদের ফোন করে সভায় আমন্ত্রণ জানান জেলা সভাপতি দুলাল। যদিও দুলালের দাবি, ‘‘মহাসচিবের সভার ব্যাপারে গত ৩ ডিসেম্বর জেলা কমিটির বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’’ তাহলে অনেকে বলছেন কেন সভার ব্যাপারে জানতেন না? দুলালের সাফাই, ‘‘জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা ৯৮ জন। তাও সবাইকেই খবর দেওয়া হয়েছিল। দশ-বারোজন উপস্থিত ছিলেন।’’ মেদিনীপুরের সভামঞ্চ থেকে খড়্গপুর শহরের নেতা দেবাশিস চৌধুরীকেও ঝাড়গ্রাম দেখার জন্য বলেছিলেন দলনেত্রী। সেই দেবাশিসের পাল্টা দাবি, ‘‘মাঠের আয়তন অনুযায়ী যতটুকু লোক ধরে তত সংখ্যক লোক এসেছিলেন। বিরোধীরা নানা রটনা করছে।’’
ছত্রধর নিজে বলছেন, ‘‘জেলায় ৮টি ব্লক। শুধুমাত্র একটি ব্লক থেকে লোক ভরানোর জন্য অনেক যানবাহন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন না মেলায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে সভায় বেশির ভাগ লোকই ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের এলাকা থেকে এসেছিলেন।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘পরিবারে মনমালিন্য হয়, মিটেও যান। সামনে ভোট। আমাদের লক্ষ্য সেদিকেই হওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy