চাঙড়: বৃহস্পতিবার বিকেলে চেয়ারে পড়ে আছে সিলিংয়ের অংশ।নিজস্ব চিত্র
বয়স সবে বছর খানেক, বাইরে থেকে চকচকে চেহারা। অথচ ভিতরে এই ক’দিনেই শোচনীয় হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি— রাজ্যের নতুন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলির অবস্থা যে এমনই, তা প্রমাণ করল এগরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বহির্বিভাগের প্রায় ৫০ ফুট ফল্স সিলিংয়ের একাংশ ভেঙে পড়ে। তবে এই প্রথম নয়। গত ৪ সেপ্টেম্বরও সুপার স্পেশ্যালিটির দো’তলার বহির্বিভাগেই ফল্স সিলিং-এক একাংশ ভেঙে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। তবে দু’দিনই বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটায় রোগী, চিকিৎসক বা কোনও কর্মী জখম হননি।
চলতি বছর জুলাই মাসেই ওটি-র কাছে বারান্দার ফল্স সিলিং ভেঙে পড়েছিল ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসাপাতালে। সেখানেও সে দিন কেউ জখম হননি ভাগ্যক্রমে। গত বছর ওই হাসপাতালেরই একতলায় রেডিওলজি বিভাগে ভেঙে পড়েছিল ফল্স সিলিং।
বার বার এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরাও। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্পের এমন দশায় হতাশ সাধারণ মানুষও। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক শনিবার বলেন, ‘‘যত বড় করে দেখানো হচ্ছে, বিষয়টা তত বড় নয়।’’ তাঁর দাবি, ওই সব হাসপাতাল কেন্দ্রীয় ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বাতানুকূল যন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ না করায়, ফল্স সিলিংয়ের একাংশ ঘেমে যাচ্ছে। তাতেই এমন কাণ্ড ঘটছে বার বার।
শুক্রবার ওই অংশেই বসেছিলেন রোগীরা। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু বাতানুকূল যন্ত্রই বা কাজ করছে না কেন? কাজই যদি না করে, তবে তেমন নকশায় কেন তৈরি করা হল হাসপাতালগুলি? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
এগরা হাসপাতালের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়েও। সোমবার সিলিং ভেঙে পড়ার পরই কেন ব্যবস্থা নিলেন না তাঁরা? বৃহস্পতিবার ফের একই ঘটনা ঘটল কী ভাবে? হাসপাতাল সুপার গোপাল গুপ্ত দাবি করেছেন, তিনি সোমবারই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও সময় ফের যে কোনও জায়গায় এ ভাবে সিলিং ভেঙে পড়তে পারে। স্বাস্থ্য দফতরের সহ-সচিব এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে।’’
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচরণ মণ্ডল সাফ বলেন, ‘‘হাসপাতাল মেরামতির দায়িত্ব পূর্ত দফতরের, আমরা চিকিৎসক। সুপারের চিঠি পেয়েছি। দ্রুত যাতে কাজ হয়, সে চেষ্টা করছি।’’
শুক্রবার এগরা সুপার স্পেশ্যালিটিতে যথা সময়ে শুরু হয় বহির্বিভাগ। চেয়ারের উপর পড়ে থাকা ভাঙা সিলিংয়ের অংশ ততক্ষণে সরিয়ে নিয়েছেন সাফাই কর্মীরা। যদিও মাথার উপর বেরিয়ে পড়া বিদ্যুতের তার বলে দেয় খসে গিয়েছে ছাদ। যে কোনও সময় ফের খসে পড়তে পারে ছাদের অংশ— বুঝতে পারছিলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
এরই মধ্যে হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন মহকুমাশাসক রজতকান্তি বিশ্বাস, হাসপাতাল সুপার গোপাল গুপ্ত, সাংসদ প্রতিনিধি জয়ন্ত সাহু। সঙ্গে ছিলেন এগরার হাসপাতাল তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা ও ফল্স সিলিং নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা। এ দিনের পরিদর্শনের পর এক দফা রিপোর্ট পাঠানো হবে জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy