সদ্যোজাতকে নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে মা হাতি। নিজস্ব চিত্র
রুট বদলেও রক্ষা হল না।
মানুষের তাড়া খেয়ে একদিনের সদ্যোজাতকে নিয়ে কোনও রকমে এক জঙ্গল ছেড়ে অন্য জঙ্গলে গেল মা হাতি। দলের অন্য দাঁতালেরা দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দিল তাদের।
মঙ্গলবার সাতসকালে এই ঘটনার সাক্ষী থাকল গোয়ালতোড়ের হুমগড় রেঞ্জের সখীশোল ও হদহদির জঙ্গল। এক্ষেত্রে কোনও দুর্ঘটনা না হলেও বন দফতর মনে করছে, সদ্যোজাত সঙ্গে থাকায় হাতির দলটি যে কোনও সময়ে পাল্টা আক্রমণ করতে পারত।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে গড়বেতার মাগুরাশোলের জঙ্গলে একটি পূর্ণবয়স্ক হস্তিনী মারা যায়। তারপর ৫০-৫৫টি হাতির ওই দলটি বাঁকুড়ার জঙ্গলে চলে যায়। তারপর দিন কয়েক আগে সেই দলটি ফের গড়বেতার জঙ্গলে আসে। হাতির দলটির নির্দিষ্ট গন্তব্য মেনে আমলাগোড়ার মাগুরাশোলের জঙ্গলে যাওয়ার কথা থাকলেও এ বার দলটি রীতি ভেঙে ‘ইউ টার্ন’ নেয়। বন দফতরের আমলাগোড়া রেঞ্জের আধিকারিক বাবলু মাণ্ডি জানান, মাগুরাশোলের জঙ্গলে থাকাকালীন যেহেতু তারা একজনকে হারিয়েছিল, তাই হাতিটি এ বার নতুন রুটে যায়। সোমবার রাতে কাষ্ঠগুড়া, রসকুণ্ডু, নতুনডাঙা, ডিগ্রির চাতাল, কিয়াবনি, কালীপুর, সখীশোলের জঙ্গলে আসে সেই দলটি। সেখানেই একটি হস্তিনীর বাচ্চা প্রসব হয়। ইতিমধ্যেই জঙ্গলে হাতি আসার খবর আশেপাশের গ্রামে ছড়িয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ হাতে লাঠি, ইট নিয়ে চিৎকার করে হাতি তাড়াতে শুরু করেন। অনেকে পটকা ফাটান। কেউ কেউ হাতিদের খুব কাছে গিয়ে মোবাইলে ছবি তুলতে থাকেন।
বন দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘মানুষের তাড়া খেয়ে সদ্যোজাতকে নিয়ে মা হাতিটি পিচের রাস্তা পেরিয়ে কিছুটা দূরের হদহদির জঙ্গলে চলে যায়। দলের অন্য হাতিগুলি তাদের পাহারা দিয়ে ঘাঁটি বদল করিয়ে দেয়।’’ রূপনারায়ণ বিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সখিশোলের জঙ্গলে একটি হাতির বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা-সহ ওই হাতির দলটির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। বাচ্চাটির যাতে ক্ষতি না হয় সেটাও দেখা হচ্ছে।’’
হাতি বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত কোনও জঙ্গলে বাচ্চা হলে হাতির দলটি সেখানেই কয়েকদিন থেকে যায়। পূর্ণবয়স্ক কয়েকটি হাতি পাহারার দায়িত্বে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত বন আধিকারিক সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘প্রসবের পরে হাতির বাচ্চা উঠে দাঁড়াতে ঘণ্টা দুয়েক সময় নেয়। তার ঘণ্টা দুই-আড়াই পরে হাঁটতে ও চার-পাঁচ ঘণ্টা পর দুধ খেতে শুরু করে। বাচ্চা-সহ মা হাতি কমপক্ষে ৩-৪ দিন একটি জঙ্গলেই থাকে। এইসময়ে তাদের কেউ উত্ত্যক্ত করলে তারা খুব আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।’’
হাতিদের কাছাকাছি না যাওয়া, তাদের অযথা উত্যক্ত না করা, সামনে গিয়ে ছবি বা নিজস্বী তুলতে নিষেধ করে প্রচার চালায় বন দফতর। তবে তারপরেও বার বার হাতিদের উত্যক্ত করার ঘটনা ঘটেছে। জেলা বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হাতি থাকলে সেই এলাকায় প্রচার করে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তবুও অনেকে এই কাজ করে। আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy