গরমে স্বস্তি। ছোট্ট হাতিশাবক ফাল্গুনীকে স্নান করানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
সপ্তাহে এই বৃহস্পতিবারই বন্ধ থাকে চিড়িয়াখানা। দর্শনাথীদের কোলাহল নেই। গরমে স্বস্তি আনতে তাই ঘন ঘন ফোয়ারা স্নান। আর থালা ভর্তি তরমুজ-শশার ফলাহার। সঙ্গে তেষ্টা মেটাতে নুন-গুড়ের শরবত।
বৃহস্পতিবার নববর্ষের দুপুরে শালবল্লির ঘেরাটোপে তারিয়ে তারিয়ে তরমুজ আর শশা সাবাড় করছিল ফাল্গুনী। জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের আবাসিক এই খুদে শাবক হাতিটির যখন তখন খিদে পায়। কিন্তু গত কয়েক দিনের দুঃসহ গরমে ফাল্গুনীর মতো ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানার প্রায় সাড়ে চারশো পশুপাখিদের কাহিল অবস্থা। শরীর জুড়োতে তাই বন্যপ্রাণীদের যত্নআত্তিতে কোনও ত্রুটি রাখছেন না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।খাবার দাবারে যেমন বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। তেমনই স্বাস্থ্যের প্রতিও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। চড়া রোদের তাপ থেকে বন্যপ্রাণিদের আড়াল করার জন্য খড় ও ত্রিপলেরও আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানায় যে শালবল্লির ঘেরাটোপে ফাল্গুনি থাকে, সেটির মাথার উপর ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া হয়েছে।
চিড়িয়াখানার কর্মী সাহেবরাম মুর্মু ফাল্গুনীকে ফায়ারা স্নান করাচ্ছিলেন। তিনি জানালেন, তাপমাত্রা বেশি বাড়লে তখন একাধিকবার স্নান করাতে হয়। দেখা গেল স্নানের সময় নানা ধরনের আওয়াজ করে আরামের জানান দিচ্ছিল বছর দেড়েকের হস্তিশাবকটি। সাহেবরাম জানালেন, গরমের জন্য অন্য খাবারের তুলনায় শশা-তরমুজ বেশি পছন্দ করছে ফাল্গুনী। এ দিন গাজর কুচি মেশানো সেদ্ধ চাল-ডাল কিছুটা খাওয়ার পরে নুন-গুড়ের জলে গলা ভিজিয়ে নেয় ফাল্গুনী। তারপর এক থালা তরমুজ আর শশা মুহূর্তে সাবাড় করে দেয়। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, দফায় দফায় ফলাহার করছে ফাল্গুনী। অন্যন্য খাবারের সঙ্গে দিনে গড়ে ২০ কেজি শশা-তরমুজ দেওয়া হচ্ছে হস্তিশাবকটিকে।
এই চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ হল দার্জিলিংয়ের তিন ধরনের পাখিগোল্ডেন ফিজেন্ট, কালিজ ফিজেন্ট ও রেড জাংগল ফাউল। এরা একেবারেই গরম সহ্য করতে পারে না। পাখিদের এনক্লোজারের মাথায় জালের উপর তাই খড় দেওয়া হয়েছে। গম, গাজর, ভেজানো মুগ ডালের সঙ্গে প্রতিদিন একটি করে মুরগির সেদ্ধ ডিম এদের খুবই প্রিয় খাবার। তাই শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য পাখিদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ওআরএস খাওয়ানো হচ্ছে। শরীর ভেজানোর জন্য এনক্লোজারের ভিতর জলও রাখা হয়েছে। চিড়িয়াখানায় রয়েছে দশটি এমু পাখি। সেগুলিকেও নিয়মিত স্নান করানো হচ্ছে। চিড়িয়াখানার বাঁদর ও হনুমানদের সকালে ভাত-ডাল, ছোলা আর বিকেলে রুটি খাওয়ানো হয়। সঙ্গে থাকে ফল। চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণিদের জন্য নিয়মিত রান্না করেন বাসি মুর্মু। বাসিদেবী জানালেন, এখন হনুমান, বাঁদররা শশা আর কলা খেতে বেশি পছন্দ করছে। এই গরমে চিড়িয়াখানার জলাশয়ের দু’টি কুমির কাঁচা মাংসের চেয়ে জ্যান্ত ল্যাঠা মাছ বেশি ভাল খাচ্ছে। টিয়াপাখির মেনুতে আপেল, তরমুজের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ময়ূরের খাদ্য তালিকায় বেশি করে কলমি শাক দেওয়া হচ্ছে।
চিড়িয়াখানার চিতল হরিণ রয়েছে ১২৫টি। হরিণ গুলিকেওবেশি করে খাওয়ানো হচ্ছে শশা, কুমড়ো আর তরমুজ। দশটি নীলগাইকেও শরীর ভাল রাখার জন্য সবুজ শাকসব্জি খাওয়ানো হচ্ছে। ভালুকেরা খাচ্ছে দুধ-ভাত আর ছাতু। সঙ্গে আপেল। তবে নেকড়ে ও হায়নার মতো মাংসাসী প্রাণীদের সপ্তাহে চারদিন মুরগি খেতে দেওয়া হচ্ছে। দু’দিন বিফ আর সপ্তাহে একদিন উপোস। প্রতি বৃহস্পতিবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে। বাংলা নববর্ষের সূচনা দিনে তাই নিরুপদ্রবে কাটাল বন্যপ্রাণীরা।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ এস হোলেইচ্চি বলেন, “বন্যপ্রাণীদের গরমে কষ্ট লাঘব করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা হয়েছে। কর্মীরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন প্রাণী চিকিৎসক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy