হাসপাতালের শয্যায় অচৈতন্য পড়ে বৃদ্ধা। —নিজস্ব চিত্র
মাস দেড়েক আগে নন্দকুমারে বাইক দুর্ঘটনায় জখম দুই অজ্ঞাত পরিচয় যুবককে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। তাঁরা মেঝেতে পড়ে ছিলেন সারারাত। প্রায় বিনা চিকিৎসায় পরদিন ভোরে মৃত্যু হয়েছিল একজনের। ততক্ষণে অবশ্য পুলিশ খুঁজে পেয়েছিল দুই যুবকের পরিবারকে।
এ বার সেই একই ভাবে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন এক বৃদ্ধা। তাও মুখ্যমন্ত্রীর সাধের সুপার স্পেশ্যালিটিতে। গত পাঁচদিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বছর ষাটেকের ওই বৃদ্ধা। ক্রমশ অবনতি হচ্ছে তাঁর শারীরিক অবস্থার। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২৬ নভেম্বর পথ দুর্ঘটনায় ওই বৃদ্ধার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। অথচ, বুধবার পর্যন্ত তাঁর স্ক্যানটুকুও করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত শনিবার সন্ধ্যায় দাসপুরের বকুলতলা সংলগ্ন তালতলা এলাকায় ঘাটাল-পাঁশকুড়া সড়কে গাড়ির ধাক্কায় জখম হন ওই বৃদ্ধা। স্থানীয় বাসিন্দারা অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে এসে তাঁকে ভর্তি করান মহকুমা হাসপাতালে। খবর পেয়ে দাসপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গাড়িটির হদিশ পুলিশ পায়নি। জানতে পারেনি জখম বৃদ্ধারও পরিচয়ও।
তারপর থেকেই হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন তিনি, অচৈতন্য। মাথার ক্ষতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। হাতে লাগানো স্যালাইনের ন ল। মাথার চোট এমনই যে চোখ খোলার মতো পরিস্থিতিও নেই। কিন্তু মাথার ভিতরেও আঘাত গভীর। সে দিকে কোনও নজর নেই। চিকিৎসক শুধু দেখে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, সঙ্কটজনক ওই বৃদ্ধাকে শুরুতেই ‘রেফার’ করে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কে, কোথায় নিয়ে যাবে তাঁকে? অগত্যা মহকুমা হাসপাতালেই ফেলে রাখা হয়। নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনায় জখম কোনও অজ্ঞাত পরিচয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হয় সরকারি হাসপাতালকেই। এমনকী ‘রেফার’ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সব ব্যবস্থা করতে হবে হাসপাতালকেই। নিয়ম থাকলেও তা আদৌও মানা হয় না।
ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে সুপারস্পেশ্যালিটি পরিষেবা চালুর উদ্যোগ চলছে বছর ধরে। অথচ এখনও সেখানে নেই কোনও আইটিইউ বা আইসিইউ। এমনকী সামান্য একটি স্ক্যান করার যন্ত্রপাতিও নেই। হাসপাতাল সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বুধবার দাবি করেছেন, “ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার কোনও ত্রুটি হয়নি। রক্ত পরীক্ষাও হয়েছে।” তবে তিনি স্বীকার করেছেন, “রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতালে স্ক্যান করার সুবিধা নেই। তাই বাইরে থেকে স্ক্যান করার কথা ভাবছি।’’
ঘটনার পাঁচ দিন পরেও সুপার ভাবছেন স্ক্যান করানোর কথা! শুনে হেসেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগিণী বলেন, “পাঁচদিন হতে চলল বৃদ্ধার জ্ঞান ফেরেনি। শুধু স্যালাইন দিচ্ছে হাসপাতাল। মাঝে মধ্যে চিকিৎসক আসছেন। কিছুই করছেন না।’’ ঘাটাল হাসপাতালের এক চিকিৎসক অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, “বৃদ্ধা কোমায় চলে গিয়েছেন। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করেই চিকিৎসা করার কথা। এখন প্রতি সেকেন্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
সরকারি হাসপাতালে শয্যার অভাবে অসুস্থ রোগীকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এ রাজ্যে নতুন নয়। ক্ষমতায় আসার পরই চিকিৎসা পরিষেবার খোলনলচে বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্যোগীও হয়েছেন একাধিক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির। সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল সুপার স্পেশ্যালিটিতে উন্নীত হলেও তাতে যে বিশেষ লাভ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই বৃদ্ধার ঘটনা। আসলে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের পাশেই তৈরি হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপার স্পেশ্যালিটি ভবন। সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে শুধু মাত্র শিশু বিভাগটি। বাকি সবই রয়ে গিয়েছে পুরনো মহকুমা হাসপাতাল ভবনে। সেখানে পরিষেবাও হাল খারাপ।
বিষয়টি জানতেনই না জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। সাংবাদিকের কাছে খবর পেয়ে তিনি বলেন, “ওই বৃদ্ধা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান, তার সব রকম ব্যবস্থা করা হবে।’’ ঘাটাল এবং দাসপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসার সব দায়িত্ব হাসপাতালের। মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy