Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
উদ্যোগ কৃষি দফতরের

আধুনিক কৃষিযন্ত্র ভাড়ায় পাবেন কৃষকরা

কৃষি পদ্ধতি আধুনিক হয়েছে অনেক, কিন্তু সে সবের ধারে কাছে পৌঁছনোর ক্ষমতা আজও নেই অধিকাংশ কৃষকের। বিশেষত ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা এখনও অনেকেই ব্যবহার করেন পুরনো কৃষি পদ্ধতি বা মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি। সে ক্ষেত্রে সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি দফতর। সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৈরি করা হচ্ছে ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’। মূলত আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ন্যূনতম ভাড়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের হাতে তুলে দেওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

কৃষি পদ্ধতি আধুনিক হয়েছে অনেক, কিন্তু সে সবের ধারে কাছে পৌঁছনোর ক্ষমতা আজও নেই অধিকাংশ কৃষকের। বিশেষত ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা এখনও অনেকেই ব্যবহার করেন পুরনো কৃষি পদ্ধতি বা মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি। সে ক্ষেত্রে সহায়তার উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি দফতর।

সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৈরি করা হচ্ছে ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’। মূলত আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ন্যূনতম ভাড়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের হাতে তুলে দেওয়াই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। আপাতত গোটা জেলায় ১৪ টি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। বিভিন্ন ব্লকে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সাহায্যে এই কেন্দ্রগুলি তৈরি করা হবে। জানা গিয়েছে, এই কেন্দ্র তৈরির জন্য ৪০ শতাংশ ভর্তুকি দেবে রাজ্য সরকার। খরচের বাকি ৬০শতাংশ দেবে সমিতিগুলি।

গত বছর অক্টোবর মাসে ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’ গড়ার জন্য জেলায় জেলায় নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল রাজ্য কৃষিদফতর। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা যাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষি কাজে উন্নতি করতে পারে সে জন্য কেন্দ্র গড়া হবে। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের জন্য এই প্রকল্পে এক কোটি টাকা ভর্তুকি এসেও গিয়েছে।

জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সুশান্ত মহাপাত্র জানান, ‘‘১৪টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিকে আমরা চিহ্নিত করেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হাতে ভর্তুকির টাকা তুলে দেওয়া হবে। নূন্যতম ভাড়া দিয়ে এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবেন।’’

তিনি জানান, সমবায় সমিতি হোক বা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ফার্মাস ক্লাব, প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যে কোনও ব্যক্তিগত মালিকানায় ‘কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’ গড়া যেতে পারে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য খরচ হতে পারে ১০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ পর্যন্ত। রাজ্য সরকার ওই সংস্থার হাতে ৪০ শতাংশ ভর্তুকি তুলে দেবে। সরকারি নির্দেশিকায় সর্বোচ্চ ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সে নির্দেশিকা পাওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষিদফতর কাস্টম হায়ারিং সেন্টারের জন্য আবেদনপত্র চায়। প্রায় ২০টি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এ দিকে জেলা কৃষিদফতর থেকে ঠিক করা হয়েছে এই ধরনের প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ফলে ১৪টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রামনগর ১ ও পটাশপুর ১ ব্লকে তিনটি করে, পটাশপুর ২ ও মহিষাদল ব্লকে দু’টি করে এবং ভগবানপুর ২, নন্দীগ্রাম ১ ও ২ এবং খেজুরি ১ ব্লকে একটি করে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিকে কাস্টম হায়ারিং সেন্টারের জন্য চিহ্নিত করেছে জেলা কৃষিদফতর। ওই সংস্থাগুলি মূলত ট্রাক্ট, পাওয়ার টিলার, পাওয়ার থ্রেসার, পাওয়ার স্প্রেয়ার, কম্বাইণ্ড হার্ভেস্টার (ফসল কাটার যন্ত্র), মিনি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার রাখার বিষয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছে কৃষিদফতরে।

কিন্তু ঠিক কত ভাড়া, কী হিসাবে দেওয়া হবে? সে সব বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত তেমন হয়নি। জানা গিয়েছে জেলাস্তরে আলোচনা করে যন্ত্রপাতির ভাড়া ঠিক করবে কৃষিদফতর ।

মহিষাদলের সহ-কৃষি অধিকর্তা মৃণালকান্তি বেরা জানান অভাবের কারণে অনেক জায়গায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন না। এ বারে সরকার কাস্টম হায়ারিং সেন্টার গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে।এর ফলে এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা নূন্যতম ভাড়া দিয়ে তাদের কৃষিকাজে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবেন।

এ দিকে এই খবরে খুশি জেলার চাষিরাও। মহিষাদলের চকগাজিপুরের কৌশিক ঘাটি জানান, আমার বিঘা তিনেক জমি আছে। কিন্তু ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলারের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার সাধ্য নেই। ভাড়া নিয়ে কাজ করি। তাতে খরচ বেশি হয়। সরকারি উদ্যোগে ভাড়া দেওয়া হলে নিশ্চই খানিকটা কম দামেই পাওয়া যাবে। তাতে খুব উপকার হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE