Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪

বন্ধ জলাধার, নলকূপে আর্সেনিক, খোঁজ নয়া প্রকল্পের

গ্রীষ্মের বরাবরের সঙ্গী জলকষ্ট। গ্রাম হোক বা শহর, জলের হাহাকার পূর্ব মেদিনীপুরের নানা প্রান্তে। কোথাও পুরসভার জলাধার অকেজো হয়ে পড়ে, কোথাও আবার বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের ব্যবস্থাই নেই। রাস্তার কলে সুতোর মতো জল পড়ে, এমন দৃশ্যও দুর্লভ নয়। জেলার জল-ছবির খোঁজ নিল আনন্দবাজার।জলের সঙ্কটের আঁচ শুধু পর্যটকেরাই নযন, গোটা মারিশদা এবং দূরমুঠ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটা বড় অংশের বাসিন্দারা অনুভব করছেন।

অকেজো নলকূপ। নিজস্ব চিত্র

অকেজো নলকূপ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কাঁথি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০২:১৮
Share: Save:

১১৬ বি জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একটি গাড়ি। ভিতরে ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বসেছিলেন এক মহিলা। ছেলেটি জল খেতে চাইছিল। জলাধার দেখে সেখানে ছেলের জন্য জল আনতে নেমেছিলেন অম্বুজ বিশ্বাস নামে নৈহাটির ওই বাসিন্দা। কিন্তু খালি জলের বোতল হাতেই ফিরতে হল তাঁকে।

দিঘায় বেড়াতে যাওয়া অম্বুজবাবু বলেন, ‘‘ছেলের তেষ্টা পাওয়ায় রিজার্ভার থেকে জল ভরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গেট তালা বন্ধ দেখে ফিরে এলাম।’’ কিন্তু জাতীয় সড়কের ধারে বিশাল আকৃতির এই জলাধার কেন বন্ধ! স্থানীয় লোকজন জানান, মাস দেড়েক আগে থেকেই জলাধারটি বন্ধ। শেষের দিকে জলাধার থেকে লবণাক্ত জল বেরোচ্ছিল। তাই প্রশাসন থেকেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জলের সঙ্কটের আঁচ শুধু পর্যটকেরাই নযন, গোটা মারিশদা এবং দূরমুঠ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটা বড় অংশের বাসিন্দারা অনুভব করছেন। কমপক্ষে ২০-২৫টি গ্রামের লোকের পানীয় জলের কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, মারিশদা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দইসাইতে একটি মাত্র নলকূপই ভরসা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই নলকূপের গায়ে গত বছর হলুদ চিহ্ন দিয়ে গিয়েছিল প্রশাসনের লোকেরা। তাঁদের দাবি, ওই নলকূপ থেকে আর্সেনিকযুক্ত জল বের হয়। আর কোথাও জল না পাওয়ায় ওই জল খেয়েই দিন কাটছে বাসন্তী ওঝা, মুক্তেশ্বর বেরার মতো কয়েকশো পরিবারের।

এক বাসিন্দার কথায়, পানীয় জলের জন্য দু-তিন কিলোমিটার দূরে লাবণ্য বাজারে যেতে হয়। মারিশদার বড় জলাধারটি বন্ধ থাকায় কাঁথি-৩ ব্লকের পানিচিয়াড়িতে আরেকটি জলাধার থেকে জল সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিল প্রশাসন। যদিও ওই এলাকার বাসিন্দাদের প্রবল আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। দইসাই এলাকার বাসিন্দা যুগলকিশোর সামন্ত বলেন, ‘‘যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল, তাঁরা দোকান থেকে জল কিনছেন। কিন্তু তা তো সবাই করতে পারছেন না।’’

গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি পুর এলাকাতেও পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। পুর এলাকার ডিঙ্গলবেড়িয়ার কাছে পিএইচই-র একটি পাইপলাইন রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তাতে গত কয়েকদিন ধরে কম জল পড়ছে। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কাঁথি মহকুমা আদালত চত্বর। সেখানে একটি পাঠাগারের পাশে কয়েক বছর আগে পানীয় জলের দুটি ট্যাপকল বসিয়েছিলেন ‘কন্টাই কো-অপারেটিভ’ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, সেই ট্যাপকলও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে গিয়েছে। অথচ আশপাশেই রয়েছে মহকুমাশাসকের দফতর, কাঁথি থানা, ডাকঘর এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রশাসনিক কার্যালয়। প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ কাজের সূত্রে সেখানে যাতায়াত করেন। অথচ পানীয় জলের অবস্থা শোচনীয়।

শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বছর দুয়েক আগে কাঁথি পুর এলাকায় নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ পরিষেবা চালু হয়েছে। নিয়মিত সেই পরিষেবা মিললেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে পুর এলাকার যে সব ওয়ার্ড কিছুটা উঁচু জায়গায়, সেখানে ট্যাপকলগুলিতে পানীয় জল পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছয় না বলে অভিযোগ।

কাঁথি শহর সংলগ্ন কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। সেখানে জন স্বাস্থ্য দফতরের যে কলগুলি রয়েছে, তা মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যায় বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে পুরসভার তরফে জলের গাড়ি পাঠিয়ে সমস্যার মেটানোর চেষ্টা হয়।

এ ব্যাপারে কাঁথি-৩ এর বিডিও মহম্মদ নুর আলম বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কের কাজ হওয়ার সময় কোনও কারণে পাইপলাইন ফেটে মারিশদা জলাধারের জল পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।’’

কাঁথি শহর ও আশেপাশের পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি দফতরের কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘এমন সমস্যার কথা জানা ছিল না। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের দ্রুত চেষ্টা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Water Crisis Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy