n দেবনাথকে পরীক্ষা করছেন চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি। রবিবার ঝাড়গ্রামের বাড়িতে।—নিজস্ব চিত্র
প্রথমে সামাজিক মাধ্যমে অনুরোধ, তারপর তহবিল গড়ে অর্থসংগ্রহ। সেই পথেই কয়েক লক্ষ টাকার সংস্থান করে আট বছরের পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক বালককে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে দিলেন একদল চিকিৎসক।
টানা চার মাস কলকাতার পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ)-এ ভর্তি ছিল ঝাড়গ্রামের বিনপুরের রঘুনাথপুর গ্রামের দেবনাথ মাইতি। তিন মাসই সে ছিল ভেন্টিলেশনে। গত ১১ জুন বাড়ি ফিরেছে ওই বালক। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসক। মূলত তাঁরই উদ্যোগে আইসিএইচ-এর চিকিৎসকেরা দেবনাথের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবাই মিলে চিকিৎসার বিপুল খরচ জোগাড় করে দিয়েছেন।
তিমিরবরণ ও গঙ্গা মাইতির ছেলে দেবনাথ ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি আবাসিক স্কুলের ছাত্র। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হস্টেলেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। শরীর অসাড় হতে শুরু করে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। দেবনাথকে ভর্তি করানো হয় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিসিইউতে। প্রাথমিক ভাবে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তিনদিন পরে দেবনাথকে কলকাতায় রেফার করা হয়। তখনই স্থানীয় এক চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। সেই মতো গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দেবনাথকে আইসিএইচ-এ ভর্তি করানো হয়। প্রভাসপ্রসূনের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয় চিকিৎসা। ধরা পড়ে স্নায়ুর জটিল অসুখ ‘গুলেনবারি সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত ওই বালক। এ ক্ষেত্রে সারা শরীর অসাড় হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক ক্ষমতা চলে যায়। অসাড় দেবনাথকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।
চিকিৎসার খরচ অনেকটাই। একেবারে গোড়া যে ‘ইনট্রা ভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল, তার প্রথম ডোজের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা। গ্রামের জমি বেচে ছেলের জন্য সেই ইঞ্জেকশন কেনেন সামান্য চাষি তিমির। কিন্তু ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেও দেবনাথের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অসহায় বাবা চিকিৎসকদের জানিয়ে দেন, চিকিৎসার বিপুল খরচ জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তেমন হলে ভেন্টিলেশন খুলে দেওয়া হোক। এরপরই উদ্যোগী হন চিকিৎসকেরা। একটি সেবামূলক সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা তহবিল গড়েন। প্রভাসপ্রসূন ও তাঁর সহপাঠীরা সামাজিক মাধ্যমে দেবনাথের ছবি দিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান। কয়েক মাসের মধ্যেই চিকিৎসার যাবতীয় খরচ উঠে আসে। চার মাসের বিল বাবদ সাড়ে চার লক্ষ টাকা মিটিয়ে দিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা তিমিরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উদ্বৃত্ত আরও কিছু টাকা অসুস্থ অন্য দরিদ্র শিশুদের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে।
রবিবার ঝাড়গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন প্রভাসপ্রসূন। ছেলেকে নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন তিমির ও গঙ্গা। প্রভাসপ্রসূন জানান, আর কয়েকটা মাস পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে দেবনাথ। আর নিজেদের উদ্যোগ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যখন জানতে পারি শিশুটির বাড়ির অবস্থা ভাল নয়, তখনই সিদ্ধান্ত নিই যে ভাবেই হোক টাকা জোগাড় করে আমরা ওর চিকিৎসা করব। অনেকে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। আমাদের উদ্দেশ্য সার্থক।’’
কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন তিমির আর গঙ্গাও। বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা পাশে না দাঁড়ালে সত্যি যে কী হত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy