রবিবার রাতে বিজেপির তরফে প্রথমে এই পোস্টারে প্রচার করা হয় (বাঁদিকে)। পরে ছবি ও নাম বাদ গিয়েছে দিলীপ ঘোষের। নিজস্ব চিত্র
বাজি বিস্ফোরণের এনআইএ তদন্ত এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এগরার খাদিকুলে বিস্ফোরণ স্থল থেকে তিনি সে কথা ঘোষণা করেছিলেন। বিরোধী দলনেতার জেলায় সেই মিছিল ঘিরেও পদ্ম শিবিরের অন্দরে দ্বন্দ্ব কাঁটা! মিছিলে থাকছেন না এলাকার বিজেপি সাংসদ (মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্ভুক্ত এগরা বিধানসভা কেন্দ্র) দিলীপ ঘোষ।
গত ১৭ মে খাদিকুলে গ্রামে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছিলেন যে, এগরায় ২৫ হাজার লোককে নিয়ে মিছিল করবেন। এনআইএ তদন্ত এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানাবেন। সেই মতো গত রবিবার রাতেই কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির তরফে দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, মঙ্গলবার বিকালে এগরা শহরে সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থেকে দিঘা মোড় পর্যন্ত মিছিল হবে। সোমবার থেকে ওই কর্মসূচি প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিজেপির ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে শুভেন্দু ছাড়াও বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ নেতৃত্ব দেবেন বলে স্থির করা হয়েছিল। দিলীপ এলাকার সাংসদও বটে। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাইকে প্রচার এবং পোস্টার পটে। তবে এদিন বেলা বাড়ার পর জানা যায়, আজ মঙ্গলবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দিলীপ থাকবেন না। একেবারে শেষ বেলায় প্রচারেও তিনি পড়েছেন। পোস্টারে তাঁর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে এগরা বিস্ফোরণ-কাণ্ড বঙ্গ বিজেপির বড়সড় ‘হাতিয়ার’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু ওই ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শেষ মুহূর্তে এলাকারই সাংসদ দিলীপের অনুপস্থিতির খবরে জল্পনা শুরু হয়েছে। গত ১৬ মে খাদিকুল গ্রামে বিস্ফোরণের পর প্রথমে সেখানে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার পরের দিন ওই গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল দিলীপ এবং রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। তবে শেষে সে দিন দিলীপ একাই গিয়েছিলেন খাদিকুল। সেদিন পূর্ব মেদিনীপুরে একাধিক কর্মসূচিতে হাজির থাকার কথা থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন সুকান্ত। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তাহলে কি বর্তমানে বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ‘কোণঠাসা’ হচ্ছেন?
২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শুভেন্দু একাধিকবার ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘‘বালুমাটি আর লাল মাটি মিলে মিশে তৃণমূলকে উৎখাত করব। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে ৩৫টি বিধানসভা বিজেপির হাতে তুলে দেবে।’’ কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, বালু মাটির শুভেন্দু আর লাল মাটির দিলীপকে তেমন ভাবে মিশে যেতে দেখা যায়নি, তা অতীতে বারেবারে দেখা গিয়েছে। এবার এগরা বিস্ফোরণের প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলে। এ নিয়ে রাজ্য বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে শাসক দল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, ‘‘এখন তৎকাল বিজেপির আধিপত্য চলছে। পুরাতন বিজেপিরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। আমাদের জেলায় আদি বিজেপির লোকেরা তৃণমূলের উন্নয়নের সঙ্গেই যুক্ত হতে চাইছেন।"
এগরা দিলীপের নিজের মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। তা সত্ত্বেও সেখানের এত বড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দিলীপ নেই কেন?
বিজেপির একটি সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের পর থেকেই দিলীপ যাতে এলাকায় না যান এবং তিনি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে গেলে বাকি নেতারা সেখানে যাবেন না বলে জেলা সভাপতিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দাবি, শুভেন্দু অনুগামী গোষ্ঠীর তীব্র আপত্তিতেই শেষ বেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রচার থেকে দিলীপ বাদ পড়েছেন। যদিও এ প্রসঙ্গে দিলীপ বলছেন, ‘‘পোস্টার থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে কি না জানা নেই। আর মঙ্গলবার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাব কি না, সে ঠিকও নেই। দল আমাকে যা নির্দেশ দেবে সেটাই আমি মেনে চলব। এর সঙ্গে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব খুঁজে নেওয়ার কোনও মানে হয় না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় গড়বেতা এবং বিকাল ৪টে নাগাদ খড়্গপুরের শালবনিতে দলের কার্যকারিনী কর্মসূচিতে যোগ দেবেন দিলীপ। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দিলীপের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দিলীপদার আসার কথা ছিল। তবে তিনি সময় দিতে পারবেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy