দাসপুরের চাঁদপুরে একটি পাম্পে তেল নেওয়ার ভিড়। নিজস্ব চিত্র
তরল সোনা থুড়ি পেট্রল ‘সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়েছে বহুদিন। তারপর থেকে দর এখনও সেঞ্চুরি পার। মাঝে বিরোধীদের ‘চাপে’ তেলের দর কমেছিল কিছুটা, কিন্তু তা ১০০-র নীচে নামেনি। সে তো রাজনীতির কথা! কিন্তু দেখা যাচ্ছে, লিটার প্রতি পেট্রলের দর ১০০ টাকা ছাড়ানোর পর থেকে চারিদিকে গেল গেল রব যতই উঠুক, বাস্তবে পেট্রলের ব্যবহার কমেনি। বরং বেড়েইছে। সাম্প্রতিক একটি পরিসংখ্যানে ধরা পড়েছে উৎসবের মরসুমে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় পূর্ব, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে পেট্রলের চাহিদা বৃদ্ধির রূপরেখা।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোপণ্য সংস্থার সাম্প্রতিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সেপ্টেম্বর মাসে পেট্রল বিক্রি হয়েছিল ৪১২৯ কিলোলিটার। সেখানে পরের মাস অক্টোবরে অর্থাৎ পুজোর মাসে বিক্রি হয়েছে ৪৪০৯ কিলোলিটার পেট্রল। প্রসঙ্গত, এক কিলোলিটার মানে হল ১০০০ লিটার। সেই হিসেবে উৎসবের মাসে ওই সংস্থা পূর্বে প্রায় দু’লক্ষ ৮০ হাজার লিটার পেট্রল বেশি বিক্রি করেছে। ঠিক এই হিসেবেই পশ্চিম মেদিনীপুরে সেপ্টেম্বর মাসে যেখানে ৪০৫০ কিলোলিটার পেট্রল বিক্রি হয়েছিল, পুজোর মাসে সেই বিক্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪১৮৪ কিলোলিটারে। যার অর্থ বিক্রি বেড়েছে প্রায় এক লক্ষ ৩৪ হাজার লিটার। অন্য দিকে, ঝাড়গ্রাম জেলায় সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে পেট্রল বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৮২২ কিলোলিটার এবং ৮৪৭ কিলোলিটার। অর্থাৎ, বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার লিটার পেট্রল।
এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, উপরের পরিসংখ্যানটি কেবল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোপণ্য সংস্থার। এর সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি পেট্রোপণ্য সংস্থাগুলির বিক্রি জুড়লে পেট্রল বিক্রির হিসেব অনেকটাই বেড়ে যাবে— মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু পেট্রলের দর যেখানে নাগাড়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেখেছে, সেখানে এমন চাহিদা বাড়ার কারণ কী? উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণবঙ্গের এই তিন জেলাতেই পেট্রল-চালিত গাড়ি এবং বাইকের বিক্রি বাড়ছে দ্রুতগতিতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির শো’রুমে খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, স্বাভাবিক অবস্থায় জেলায় যেখানে মাসে ৮০ থেকে ১০০টি গাড়ি বিক্রি হয়ে থাকে, পুজোর মরসুমে সেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ গাড়ি বিক্রি বেড়েছে এবং বিক্রি হওয়া গাড়িগুলির বেশিরভাগই পেট্রোল-চালিত। অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরে যেখানে মাসে ১৮০০ থেকে ২০০০টি বাইক বিক্রি হত, পুজোর মরসুমে সেই বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, পেট্রলের দাম বাড়লেও গাড়ি এবং বাইকের বিক্রিতে তার কোনও প্রভাব তো পড়েইনি, বরং বিক্রি বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি।
তবে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোপণ্য সংস্থার হিসেবে ডিজেলের বিক্রিতে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যদিও এর জন্য ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন না পেট্রোপণ্য সংস্থার আধিকারিকরা। সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল যথাক্রমে ১৮৭৩০ ও ১০৪৯১ কিলোলিটার। কিন্তু অক্টোবর মাসে অর্থাৎ উৎসবের মাসে সেই বিক্রি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৮২৪১ এবং ১০২৩৮ কিলোলিটারে। অর্থাৎ পূর্বে ডিজেলের বিক্রি কমেছে চার লক্ষ ৮৯ হাজার লিটার এবং পশ্চিমে বিক্রি কমেছে দু’লক্ষ ৫৩ হাজার লিটার।
পেট্রোপণ্য সংস্থার আধিকারিকদের মতে, ডিজেলের ক্ষেত্রে উৎসবের মাসে বিক্রি কমার কারণ হল— গণ এবং পণ্য পরিবহণের (বাস ও লরি) ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এক রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোপণ্য সংস্থার আধিকারিকের ভাষায়, ‘‘উৎসবকে নির্বিঘ্ন করার জন্য ওই সময় পণ্যবাহী গাড়িগুলির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন রাস্তায় বড় গাড়ি চলাচলও নিষিদ্ধ থাকে। যে কারণে ডিজেল-চালিত পণ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক, লরি ইত্যাদির ব্যবহার কমে যাওয়ায় ডিজেল বিক্রিতে প্রভাব পড়ে।’’ তিনি আরও জুড়ছেন, ‘‘যেহেতু দুই মেদিনীপুরের তুলনায় ঝাড়গ্রাম জেলায় অনেক কম সংখ্যক পুজো হয়, তাই সেখানে নিষেধাজ্ঞার পরিমাণও কম। যে কারণে ওই জেলায় পুজোর সময় ডিজেল বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।’’ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে ঝাড়গ্রাম জেলায় সেপ্টেম্বর মাসে যেখানে ১৫৯০ কিলোলিটার ডিজেল বিক্রি হয়েছিল, পুজোর মাসে তা দাঁড়িয়েছে ১৭০৬ কিলোলিটারে। অর্থাৎ, ডিজেলের বিক্রি বেড়েছে এক লক্ষ ১৬ হাজার লিটার। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy