টাকা নেই। অব্যাহত দুর্ভোগ। মেদিনীপুর শহরে জেলা পরিষদের সামনে
কোনও এটিএমে ‘নো ক্যাশ’। আবার কোনও এটিএম ‘আউট অফ অর্ডার’। টাকা তুলতে বেরিয়ে কপালে জুটছে ভোগান্তি। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে অনেককে।
মেদিনীপুরের যে ক’টি এটিএমে টাকা রয়েছে তার অধিকাংশেই ২০০০ টাকার নোট। ফলে টাকা মিললেও খুচরোর সমস্যা মিটছে না। মেদিনীপুরের গৃহবধূ রুমা মণ্ডলের কথায়, “হাতে একদম খুচরো নেই। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার এটিএমে গিয়েছি। প্রতিবারই ২০০০ টাকার নোট পেয়েছি।” তাঁর কথায়, “১৮০০-১৯০০ টাকা তুলতে চাইলেও এটিএম থেকে বেরোচ্ছে না। ২০০০ টাকা তুলতে চাইলেই এটিএম থেকে একটা নোট বেরোচ্ছে।”
সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) শক্তিপদ পড়্যা। তিনি বলেন, “এটিএমে ২০০০ টাকার নোটই বেশি থাকছে। এখন ১০০ টাকার নোট কম আসছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।” শহরের হাতেগোনা কয়েকটি এটিএমে মাঝেমধ্যে ১০০ টাকার নোট বেরোচ্ছে। তবে এটিএমে টাকা ভরার কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এটিএমে পৌঁছেও অনেকে দেখছেন
‘নো ক্যাশ’ বোর্ড।
কেরানিতলায় এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ।
শহরের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া শ্রেয়া মাইতির কথায়, “দু’দিন আগের কথা। শুনেছিলাম, কেরানিতলার এক এটিএম থেকে ১০০ টাকার নোট বেরোচ্ছে। গিয়ে দেখি কোথায় কী! দুপুরের দিকে না কি কয়েকজন ১০০ টাকার নোট পেয়েছেন। পরে ২০০০ টাকার নোটই বেরোতে শুরু করে।” মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের কথায়, “যত দিন যাচ্ছে শহরে খুচরোর সমস্যা তত বাড়ছে। সবাই যেন আতান্তরে। এখন এটিএম থেকে ২০০০ টাকার নোট বেরোচ্ছে। কিন্তু এই নোট ভাঙানো হবে কোথায়? নোট ভাঙাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। ব্যবসায়ীরা যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমন খদ্দেররাও সমস্যায় পড়ছেন।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে এটিএমের সংখ্যা ৩৬৯। মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরেও শতাধিক এটিএম রয়েছে। অভিযোগ, শহরের একাংশ এটিএম দিনের অধিকাংশ সময় অচল থাকছে। হয় শাটার নামানো। না- হয় টাকা শেষ। স্বভাবতই পকেটে টান শহরবাসীর! কাজ চালানোর মতো খুচরোও বাড়ন্ত। জেলার এক ব্যাঙ্ক- কর্তা মানছেন, “নতুন ২০০০ টাকার নোট এসেছে ঠিকই তবে তা ভাঙানোও তো সমস্যার। ১০০ টাকার নোট বেশি এলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইতিমধ্যে সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করা হয়েছে। আশা করি, এই নোট- ভোগান্তি বেশি দিন চলবে না।” শহরবাসীর বক্তব্য, ২০০০ টাকার নোট নিয়ে বাজারে গেলে খুচরো পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে। এটিএম থেকে ১০০ টাকার নোট বেরোলে এই সমস্যা হত না।
খড়্গপুরের অধিকাংশ এটিএমেও এ দিন টাকা মেলেনি। শহরের মালঞ্চ, ইন্দা, ঝাপেটাপুর, আইআইটি সংলগ্ন এটিএম কাউন্টারেও দু’হাজার টাকার নোট ছাড়া অন্য নোট মেলেনি। আবার গোলবাজার, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা, খরিদার অধিকাংশ এটিএমে টাকা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বেশিরভাগ গ্রাহককে। খরিদার একটি এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়েও খালি হাতে ফেরেন দুলাল দাস। তিনি বলেন, “তিনটি এটিএম কাউন্টার ঘুরলাম। কোথাও টাকা নেই। ইন্দার একটি এটিএমে টাকা ছিল কিন্তু লাইন কিছুটা এগিয়ে যেতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই আমাকে ফিরে আসতে হল।”
এলআইসি মোড়ে এসবিআইয়ের সামনে দীর্ঘ লাইন ।
৪০ কিলোমিটার দূরে ডেবরার মারোতলা থেকে এ দিন খড়্গপুরে টাকা তুলতে এসেছিলেন বিমা কর্মী শেখ ইনতেখাব আলম। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকার সমস্ত এটিএম কাউন্টারে ঘুরেও টাকা পাইনি। খড়্গপুরে টাকা তুলতে এসেছিলাম। এখানেও এটিএম থেকে একশো টাকার নোট পেলাম না। অগত্যা ২ হাজার টাকার নোট-ই তুলতে হল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই টাকা নিয়ে ডেবরায় গিয়ে একশো টাকার জিনিস কিনলে খুচরো পেতে কালঘাম ছুটবে।”
শুধু এটিএম নয়, ব্যাঙ্কে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এ দিন ইউবিআই-এর গোলবাজার শাখায় টাকা তুলতে এসেছিলেন সাঁজোয়ালের বাসিন্দা প্রৌঢ় কৃষ্ণা নিয়োগী। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর অসুস্থ বোধ করায় খালি হাতেই ফিরে যান তিনি। কৃষ্ণাদেবীর কথায়, “আমার চোখের অস্ত্রোপচার হবে। তাই ৫ হাজার টাকা তুলতে এসেছিলাম। আমার হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। এক ঘণ্টা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ লাগছে। তাই টাকা না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। বুধবার অন্য ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়ে দেখব কী হয়।”
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy