সরডিহায় এই জুলির বাঁধকে ঘিরে মৎস্য পর্যটনের দাবি পূরণ হয়নি আজও। নিজস্ব চিত্র।
ইংরেজ আমলের প্রকাণ্ড জলাশয়কে কেন্দ্র করে মৎস্য-পর্যটনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এলাকার মৎস্যজীবীরা। সরকারি স্তরে আগ্রহ দেখিয়ে আড়াই বছর আগে এলাকা পরিদর্শনও করেছিল বেনফিসের প্রতিনিধি দল। কিন্তু ঝাড়গ্রাম ব্লকের সরডিহা এলাকার ‘জুলির বাঁধ’কে কেন্দ্র করে মৎস্য-পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা আপাতত বিশ বাঁও জলে!
এলাকার মৎস্যজীবীদের সংগঠিত করে জুলির বাঁধ জলাশয়টির হাল ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দরবার করে চলেছেন সরডিহার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক গৌতমকুমার ভকত। বছর তিনেক আগে জুলির বাঁধকে কেন্দ্র করে মৎস্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গৌতম। তাঁর উদ্যোগে এলাকার মৎস্যজীবীদের নিয়ে সমবায় সমিতি গড়াও হয়। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন হলেও ওই জলাশয়টি এখনও অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের অধীনে রয়েছে। জলাশয়টি মাছ চাষের জন্য লিজে দিয়ে রেখেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের সরডিহা অঞ্চলের ‘জুলির বাঁধ’ হল ইংরেজ আমলের ৭০ বিঘের একটি প্রকাণ্ড জলাশয়। বাম সরকারের আমলে আশির দশকে মৎস্য দফতরের উদ্যোগে ওই জলাশয়কে কেন্দ্র চিনের প্রযুক্তির সহায়তায় ‘ইকো হ্যাচারি’ গড়ে উঠেছিল। সেখানে ডিমপোনা থেকে চারা পোনা তৈরি হতো। সরকারি ভাবে মৎস্যচাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। কিন্তু আড়াই দশক আগে সরডিহার ওই ইকো হ্যাচারি ও মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের জুনপুটে চলে যায়। পরে পরিত্যক্ত জুলির বাঁধের দখল নেয় অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।
জুলির বাঁধকে ফের পাদপ্রদীপে নিয়ে আসেন গৌতম। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের সংগঠিত করেন। গণস্বাক্ষর করে জুলির বাঁধকে ঘিরে মৎস্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব দেন রাজ্য সরকারকে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি সনদ জমা পড়ে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জেনে তৎকালীন পর্যটন সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলেন। ততদিনে ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন হয়ে গিয়েছে।
পর্যটন সচিব বিষয়টি তৎকালীন জেলাশাসকের কাছে পাঠান। ঝাড়গ্রাম ব্লক প্রশাসন জুলির বাঁধ পরিদর্শন করে জেলায় রিপোর্ট জমা দেয়। ইতিমধ্যে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন গৌতম। মৎস্যমন্ত্রীর পরামর্শে বেনফিসের কাছে ২৮ দফা লিখিত প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল বেনফিসের এক প্রতিনিধি দল জুলির বাঁধ পরিদর্শন করেন। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা আশায় বুক বাঁধেন। মৎস্যজীবীদের নিয়ে সমবায় সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৮-র মে মাসে মৎস্যজীবীদের নিয়ে ফিস এগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি গঠিত হয়।
জুলির বাঁধের ওই এলাকায় রয়েছে ইংরেজ আমলের কুঠি, নীলকর সাহেবদের ঘোড়াশালা, ১৯৫৭ সালে স্থাপিত গ্রামীণ পাঠাগার, প্রাচীন শিব মন্দির। জেলার সবচেয়ে পুরনো হাট বসে ওই এলাকায়। সেখানে হোম স্টে করার মতো পরিকাঠামোও রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস বলেন, ‘‘জুলির বাঁধটি এখনও ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের হাতে আসেনি। ওই জলাশয়কে কেন্দ্র করে মৎস্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ার প্রস্তাবের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy