তখনও ঝড় ওঠেনি। সুনসান ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথার মোড়। নিজস্ব চিত্র
আমপানের ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল ঝাড়গ্রাম জেলার জনজীবন।
বুধবার বেলা বাড়তেই এই জেলায় ঝড়ের গতিবেগ বাড়ে। দুপুর পৌনে ১ টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরে ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া ৫ নম্বর রাজ্য সড়ক (শহরের মেন রোড) ধারে একটি মলের কাছে একটি বহু পুরনো গাছ শিকড় সমেত ভেঙে পড়ে। ওই সময় ছাতা মাথায় হেঁটে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তিনি। গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায় বিদ্যুতের তার। শহরের রেল বাজার সংলগ্ন এলাকায় আরও দু’টি গাছ ভেঙে পড়ে। রেক রোডেও একটি গাছ ভাঙে। শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে গিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। শহরের কনকপল্লি এলাকায় শাল গাছ ভেঙে পড়ে দুটি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা দুর্যোগের মধ্যেও বিদ্যুতের লাইন মেরামতির জন্য পথে নামলেও ঝড়-বৃষ্টির জন্য মেরামতির কাজ ব্যাহত হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম শহরে খোলা হয়েছে ৯টি শিবির। এছাড়া জেলার ৮টি ব্লকে ১২টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। নয়াগ্রাম ব্লকের ৯০ জন বাসিন্দাকে এবং সাঁকরাইল ব্লকের আড়াইশো বাসিন্দাকে আশ্রয় শিবিরে সরানো হয়েছে। জেলার ৮ টি ব্লক অফিস সারা রাত খোলা ছিল।
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘কিছু মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি না থামলে ক্ষতির পরিসংখ্যান বলা সম্ভব নয়। শহর ও গ্রামীণ এলাকার কিছ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে (০৩২২১-২৫৮২২৮) ফোন করে সমস্যার বিষয়ে জানানো যাবে বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করেছে। সেখানে পাঁচজন চিকিৎসক, একজন অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার, ডেপুটি নার্সিং সুপার, একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও একজন গাড়ির চালক রয়েছেন।
এ দিন সকালে বৃষ্টি মাথায় হাতে গোনা কিছু লোকজন রাস্তায় নেমেছিলেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির জন্য রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যায়। আট দিন ‘সিল’ থাকার পরে প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে মঙ্গলবার খুলেছিল ঝাড়গ্রামের জুবিলি বাজার। তবে বুধবার দুর্যোগের জন্য বাজারের বেশিরভাগ দোকানপাট খোলেনি। এ দিন দুর্যোগের মধ্যেও শহরের ওষুধ-সহ জরুরি পরিষেবার কিছু দোকান খুলেছিল। ঝাড়গ্রাম শহরের বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুর্যোগের মধ্যেও পথে নামেন ঝাড়গ্রাম শহর যুব তৃণমূলের সম্পাদক উজ্জ্বল পাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
মহকুমাশাসক তথা পুর-প্রশাসক সুবর্ণ রায় জানান, রাতে গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে যে গাছগুলি ১১ কেভি লাইনের ভেঙে পড়েছে, সেগুলি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে রাতে বলা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম শহরের প্রায় একশো বাসিন্দাকে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে। এ দিন রাতে পুরসভার উদ্যোগে সাড়ে তিনশো লোকজনকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। সূত্রের খবর জেলার সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর, বেলিয়াবেড়া, ও নয়াগ্রাম ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনটি মাটির বাড়ি ভেঙেছে। গোটা ৫০ টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগে ঝাড়গ্রামে আটকে পড়া ১৮০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে সরকারি উদ্যোগে দু’টি জায়গায় রাখা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগ কাটলে তাঁরা গন্তব্যে ফিরবেন।
জেলাশাসক আয়েষা রানি জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy