ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ সরানো হয়নি এখনও। মেদিনীপুর কালেক্টরেট চত্বরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
আমপান কেড়েছে প্রাণ। তারপর থেকে শুধুই হয়রানি। দরকারি সরকারি নথি পেতেই এখন চলছে দোরে দোরে ঘোরার পালা।
গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আমপানে গাছ ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল মোহনপুরের বাগদা গ্রামের বাসিন্দা নবকুমার পাত্রের (১৭)। এক মাস পরেও মেলেনি মৃত্যুর শংসাপত্র এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। নথি নেই। তাই মেলেনি সরকারি সাহায্যও। দরিদ্র পরিবার। নিয়মকানুনও ভাল জানা নেই। তাই পুলিশ, পঞ্চায়েত, ব্লক অফিসে ঘুরে চলছেন নবকুমারের বৃদ্ধ দাদু নিত্যানন্দ। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে-ওখানে বারবার এই বয়সে ছুটতে হচ্ছে। বিভিন্ন কাগজ চাইছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কোনও কাগজ পাওয়া যায়নি। তাই কোনও সুরাহা মিলছে না।’’
দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মেলেনি তা-ও। বিধায়ক বলছেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে টাকা এখনও আসেনি। সেই টাকা এলে আমার তরফ থেকে দেওয়া টাকাও একসঙ্গে দেওয়া হবে।’’ পরিবারের আটজন সদস্য। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ। মৃতের বাবা, মা, দাদা-সহ অনেকেই দিল্লি থেকে ফিরেছেন। ঘরে বসে আছেন সবাই। সম্বল বলতে পুলিশের তরফে দেওয়া কিছু টাকা।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া নবকুমারের উপর পড়ে গিয়েছিল খেজুর গাছ। প্রথমে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি সেখান থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল এবং শেষে কলকাতার এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয় নবকুমারকে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যু যেহেতু এসএসকেএমে তাই শংসাপত্র দেবে কলকাতা পুরসভা। প্রয়োজন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। এসএসকেএমের নথি পরিবারের কাছে রয়েছে। তার ভিত্তিতে দাহ হয়েছে গ্রাম সংলগ্ন শ্মশানে। কিন্তু মিলছে না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, এসএসকেএমের ডেথ সার্টিফিকেট, শ্মশানে দাহের নথি নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করানোর পর মৃত্যুর সংশাপত্র দেওয়া হয়। কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, নির্দিষ্ট দিন পরে নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে লালবাজার থেকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু এত নিয়ম জানা নেই মৃতের পরিবারের। নিত্যানন্দ বলেছেন, ‘‘সকলেই নথি চাইছেন। কী ভাবে নথি পাব সে ব্যাপারে কেউ সাহায্য করছেন না।’’
একশোদিনের কাজও মিলেছে? মৃতের বাবা গোবিন্দ বলেন, ‘‘রেশনের চাল থেকেই চালাতে হচ্ছে। একশোদিনের কাজও হচ্ছে না এলাকায়। কী করে বাঁচব!’’ গত ২০ মে পিংলার রাউতচকের বাসিন্দা রবিন পুর্তির (৩০) বাড়ির অ্যাসবেসটসের ছাউনিতে গাছ পড়েছিল। তাই দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। ভাগচাষি রবিনের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র। দিয়েছিলেন নগদ ৫হাজার টাকা। পুলিশের থেকেও মিলেছিল আরও ৫হাজার টাকা। আশ্বাস মিলেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে এই পরিবার। অবশ্য এক মাস হতে চললেও এখনও পর্যন্ত সেই টাকা মেলেনি। শুধুমাত্র জাতীয় পরিবার সহায়তা কর্মসূচি প্রকল্পে ৪০হাজার টাকা পেয়েছে রবিনের পরিবার। দশ বছরের ছেলে স্বপনকে নিয়ে সেই টাকায় ক’দিন চলবে সেই ভাবনায় দিন কাটছে রবিনের স্ত্রী মামনির। তাঁর কথায়, ‘‘৪০হাজার টাকায় ক’দিন চলবে? মুখ্যমন্ত্রী যে আড়াই লক্ষ টাকা দেবেন বলেছিলেন তা পাইনি। কেউ কিছু বলছেও না। জানি না কী হবে!”
যদিও বিষয়টি নিয়ে পিংলার বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পক্ষ থেকে ওই মৃতের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় তার কাগজপত্র জেলায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াস্তরে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy